‘বিনিয়োগের জন্য আর কী চাই’

প্রতিকূলতার মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অগ্রগতির ধারা ধরে রাখা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2014, 05:47 PM
Updated : 28 Oct 2014, 05:51 PM

এক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ এসে দেখে আর কী করার দরকার, সেই পরামর্শও চেয়েছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাম্প্রতিক সফরে খালিজ টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং অর্থনীতিক উন্নয়নের গতিধারা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

গত ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ হাসিনার আমিরাত সফরে বিভিন্ন বৈঠক ও বক্তৃতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তেলসমৃদ্ধ দেশটির ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নিয়ে আমাদের দেশে এসে ঘুরে দেখতে হবে। তাদের বিনিয়োগের সুবিধার জন্য বাকি কাজ আমরা করব।”

আমিরাতের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির বিভিন্ন সূচক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত সমষ্টিক অর্থনীতির সব সূচক শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে।

“রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দুই অংকে উঠে বেড়ে ৩০ দশমিক ৫ বিলিয়িন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে বাড়তে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ২২ বিলিয়ন ডলারে উঠে স্থিতিশীল রয়েছে।”

“বাংলাদেশি টাকার মানও স্থিতিশীল রয়েছে, কখনও কখনও ডলারের বিপরীতে তা শক্তিশালী থাকছে। তাই যে কোনও বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ভাল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।”

বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী।

“আমরা নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ অনেকটা সহজ করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরও উপযোগী করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছি।”

এখন আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের বড় বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় দিকগুলো সরকার তুলে ধরছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশের অর্জিত বিশাল সমুদ্রসীমা ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। এর ফলে বাংলাদেশ ‘ব্লু ইকোনমি (সমুদ্র অর্থনীতি)’র দেশে পরিণত হবে বলে দাবি করেন তিনি।

তৈরি পোশাক শিল্পের সুবিধা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে দুবাই ডিজাইন ডিস্ট্রিক্ট ও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পোদ্যাক্তাদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের সুবিধা দিতে আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহ্ইয়ানের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বন্ধুত্বপূর্ণ এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমিরাতের নাগরিকদের জন্য ভিসাবিহীন প্রবেশের জন্য সম্প্রতি দেওয়া ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

এছাড়া ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের জন্য ঢাকার গুলশানে জমি হস্তান্তরের বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশের দূতাবাসের জন্য আবু ধাবিতে এবং কনসুলেট অফিসের জন্য দুবাইতে জমি দেওয়ার জন্য আমিরাত সরকারও জমি দেবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।