সোমবার দুপুরে দুবাইয়ের জাবিল প্রাসাদে আমিরাতের উপ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনস্যুলেট অফিসে এক ব্রিফিংয়ে শহিদুল হক বলেন, “উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। এতে দুই দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।”
আরব আমিরাতে স্বাধীনতার পর যে উন্নয়ন হয়েছে বৈঠকে তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উন্নয়নে বাংলাদেশি কর্মীরাও যে জড়িত- সে বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশেষ ওপেনিংয়ের অনুরোধ করেন। আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।”
সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার। এক কোটিরও কম জনসংখ্যার এই দেশে কাজ করছেন দশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি।
আমিরাত আগে নিয়মিত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিলেও ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য আবার খোলার বিষয়ে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব।
আমিরাত ইতোমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া আরো সহজ করতে আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা দূতাবাসে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দেবে তারা।
শহিদুল বলেন, বৈঠকে দুই পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বাড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
“আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান। তবে জনশক্তি নিয়ে সাময়িক সমস্যার কথাটিও বৈঠকে উঠে এসেছে।”
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেন।
“সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় বিরাট সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে তার ভাবনার কথা তুলে ধরেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী।”
বাংলাদেশে আরব আমিরাতের বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস, ইতিহাদ ও আল অ্যারাবিয়ার ব্যবসার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম।
শিক্ষা, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান সচিব।
দুই নেতার বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্থানান্তর, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও ঢাকায় আমিরাতের দূতাবাসের জন্য প্লট হস্তান্তরে দুই দেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
দুবাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাস আল খায়মার শাসক সাউদ বিন সাকোর আল কাশেমীর দেওয়া মধ্যান্ন ভোজে অংশ নেন।
তিন দিনের এই সফর শেষে রাতে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।