জিএসপি অব্যাহত রাখবে ইইউ

‍মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 12:53 PM
Updated : 23 Oct 2014, 12:53 PM

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলোর এই জোট ‘জিএসপি প্লাস’র  আওতায় বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিয়ে যাবে বলে  বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের শ্রম খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছর ৮ জুলাই ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ইউরোপীয় কমিশন (ইসি), যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিরা গত ২০ অক্টোবর ব্রাসেলসে এক সভায় মিলিত হন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পক্ষে ওই সভায় অংশ নেয়।

সভায় ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র ও আইএলও বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মতামত তুলে ধরেছে তা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ব্রাসেলসে সভা শেষে ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও আইএলও আউটকাম ডকুমেন্ট হিসেবে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ অ্যান্ড স্টক টেকিং অব প্রগেস’ গ্রহণ করেছে।

“মূলত ২০১৩ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বিনির্মাণে কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং আরও কী কী করণীয় রয়েছে মূলত সেসব বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই ডকুমেন্টে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ‍পার্টনাররা। বিশেষ করে শ্রম আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রম সংগঠন ও সিবিএ করার স্বাধীনতা, ইউনিয়নের নিবন্ধন বাড়ানো, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নেয়া পদক্ষেপ, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের কারখানা ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ও কাঠামোগত ইন্টেগ্রিটি যাচাই ইত্যাদিতে তারা খুশি। তবে এসব বিষয়ে আরও অগ্রগতি আনার পরামর্শ দিয়েছে তারা।”

তিনি বলেন, “সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি আমরা আমাদের কম্প্যাক্ট পার্টনারদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি আগামীতে আমাদের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারিত হবে।”

বাণিজ্য মন্ত্রীর মতে, ২০১৩ সালের ৮ জুলাই এই ‘সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট’ প্রকল্প নেয়ার পরে ২২ জুলাই শ্রম আইনে পরিবর্তন আনায় শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধনে নতুন গতি এসেছে।

“২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৩৬টি শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুনভাবে ১৮৯ জন পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। ইপিজেডে ব্ল্যাকলিস্টিং বন্ধ করাসহ সেখানে ডব্লিউডব্লিউএ কর্তৃক সিবিএ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

গত বছরের জুনে বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। জিএসপি ফিরে পেতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নের কয়েকটি শর্ত দেয় তারা।

এই সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫ হাজার ধরনের পণ্য বিনাশুল্কে রপ্তানি করতে পারত, তবে এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্তের কয়েকদিন পরই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে ‘অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা’ বহাল রাখার ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশই কেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৃহৎ এই বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্য রপ্তানিতে জিসএপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ।   

তবে গত বছরের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার ক্যারেল ডি গুট জানান, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের বাজারেও বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি স্থগিত হতে পারে।