‘উন্নত সেবার জন্যই ৩ কোটি গ্রাহক বাংলালিংকে’

গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন ও উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেই বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে বলে মনে করেন কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিয়াদ সাতারা।

.বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 05:26 PM
Updated : 28 Sept 2014, 06:19 PM

এই সেবাকে আরো উন্নত করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে চায় মোবাইল অপারেটর এই কোম্পানি।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ভিমপেলকম লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের যাত্রা শুরু।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য মোবাইল সংযোগ সহজলভ্য করে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা বাংলালিংকেরও।

রোববার গুলশানে বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শামীম আহমেদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিন কোটির মাইলফলকের অর্জনে অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের নানা দিক তুলে ধরেন জিয়াদ সাতারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা তিন কোটির মাইলফলক ছোঁয়ার সাফল্যের পেছনে কি কাজ করেছে বলে আপনি মনে করেন?

জিয়াদ সাতারা: গ্রাহকরা সব সময় কম মূল্যে সেবা পেতে চায়। গ্রাহকের এই চাহিদা মেটাতে বাংলালিংকের উন্নতমানের সেবা ও নেটওয়ার্ক এই সাফল্য অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।

বাংলালিংক বরাবরই তার ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের পছন্দ ও চাহিদা বিবেচনা করে বাজারে নিত্য নতুন পণ্য-সেবা আনতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলালিংক গ্রাহকমুখী মোবাইল ফোন কোম্পানি; আমরা সব সময় গ্রাহকদের প্রয়োজন ও চাহিদার নিরিখে নিত্য নতুন পণ্য ও সেবা বাজারে নিয়ে আসতে নিরন্তর কাজ করে চলেছি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলালিংকের এই অগ্রযাত্রায় আপনি কোন বিষয়টিকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?

জিয়াদ সাতারা: তিন কোটি একটি বিশাল গ্রাহকসংখ্যা। তারা সব সময় ‍নতুন ও কম মূল্যের সেবা চায়।  গ্রাহকদের এই আকাঙ্খা পূরণ করাকেই আমি সবচেয়ে বড় চ্যালঞ্জ হিসেবে দেখি।

আমরা মনে হয়, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা ভালই করছি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলালিংকের  নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে? এই নেটওয়ার্ক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

জিয়াদ সাতারা: গ্রাহকদের বিশ্বমানের সেবা দিতে বাংলালিংক গত কয়েক বছর ধরে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বাংলালিংক এ ব্যাপারে খুবই আস্থাশীল যে তার প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সক্ষমতা-উৎকর্ষতা এদেশের বাজারে সর্বোত্তম।

নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নে বিনিয়োগের জন্য বাংলালিংক প্রথমবারের মতো বিদেশি মুদ্রায় বন্ড ছেড়ে ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। বাংলালিংকের সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন থ্রিজি নেটওয়ার্ক দেশের ৬৪ জেলাতেই বিস্তৃত হয়েছে।

বাংলালিংক এদেশের মোবাইল ফোনের বাজারে ‘মিনিট ব্যাক অন কল ড্রপ’ নামে নতুন একটি নজিরবিহীন সেবা নিয়ে এসেছে। এটি আমাদের সার্বিক নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ ও জোরদারকরণ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রমাণ করে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলাদেশে ডাটা ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে বলুন।

জিয়াদ সাতারা: ডাটা ব্যবসা প্রতিটি দেশেই এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এটি একটি বিস্ময়; এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আমরা আশা করি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: থ্রিজি নিয়ে বাংলালিংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জিয়াদ সাতারা: বাংলালিংকের দ্রুত গতির থ্রিজি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জরিপেও সমাদৃত হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বাংলালিংক ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলাতেই থ্রিজি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা- থ্রিজি সেবাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দেওয়া। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ আমাদের সেবা উন্নত এবং মানসম্পন্ন। আশা করছি, শিগগিরই আমরা এসব এলাকায় আমাদের সেবা পৌঁছে দিতে পারব।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: থ্রিজি সেবা চালুর এক বছরের মাথায় বিটিআরসি আরো আধুনিক ও উচ্চগতি প্রযুক্তি এলটিই বা ফোরজি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, ফোরজি চালুর উপযুক্ত সময় এখন?

জিয়াদ সাতারা:  কোনো একটি সেবার সফলতা নির্ভর করে তার ইকো সিস্টেমের উপর। ফোরজি সেবার মতো প্রযুক্তির ইকো সিস্টেম হচ্ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট, চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা। এলটিই বাজারে এলে মানুষ কতটা লাভবান হবে তা চিন্তা করতে হবে।

ফোরজি বা এলটিইর জন্য আলাদা হ্যান্ডসেট প্রয়োজন হয়। বর্তমানে থ্রিজি মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যাই খুবই কম। আগে থ্রিজি মোবাইলের বাজার নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থ্রিজি সেবা নিয়ে যেতে হবে এবং এর উচ্চ গতি নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই ফোরজি চালু করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং কর নীতির জন্য ব্যবসা ভালভাবে চলছে না বলে টেলিকম অপারেটররা প্রায়ই অনুযোগ করে থাকেন । এ বিষয়ে আপনার মত কী; কেমন হওয়া হওয়া উচিত এই কাঠামো?

জিয়াদ সাতারা: এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এ রকম হয়ে থাকে। অপারেটরদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভাল কাজের যে প্রশংসা করা হয় না তা না। আমি বাজার উদারীকরণের পক্ষে। বিটিআরসি যেভাবে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আমার মনে হয় তার দরকার নেই।

বিটিআরসি অনেক ভাল কাজও করছে। যেমন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগে ‘ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট’ কমিয়ে আনার পাশাপাশি গেটওয়েগুলোর সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করেছে, এটি খুব ভাল কাজ হয়েছে।

আমরা যদি বাংলাদেশের বাজার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয় সন্তুষ্ট না হয়ে হতাশ হতাম তাহলে এখানে থাকতাম না। বুঝতেই পারছেন আমরা খুশি। করনীতি একটি বাস্তবতা; যে কোনো পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে ব্যবসার আয়ের উপর কর আরোপ করা হয় রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। বাংলাদেশের করনীতি আমরা যে রকম চাই সেরকম বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারের দীর্ঘ পরিকল্পনা রয়েছে। কর কমানো হলে অপারেটররা যে অতিরিক্ত লাভ করবে তা নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও গ্রাহক সেবায় ব্যয় করতে পারবে। শিথিল করহার সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলালিংকের ৩ কোটি গ্রাহকের উদ্দেশ্য আপনার কোন বিশেষ বক্তব্য রয়েছে কি না?

জিয়াদ সাতারা: আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য গ্রাহকদের ধন্যবাদ। তাদের এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই- আপনাদের উন্নত সেবা দিতে আমরা প্রতিটি দিন কাজ করে যাচ্ছি।