বেসরকারি বিমান: দুটি আছে টিকে, তাও অনেক ভুগে

যাত্রা শুরুর পর থেকে গত ১৭ বছরে পাখা গুটিয়ে নিয়েছে কার্যক্রম শুরু করা বেশিরভাগ বেসরকারি বিমান সংস্থা।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 04:59 PM
Updated : 28 Sept 2014, 05:19 PM

শুরুর পর পর্য়ায়ক্রমে ১০টি বেসরকারি বিমান সংস্থা কার্যক্রম শুরু করলেও টিকে থাকতে পারেনি ছয়টিই।

বাকি চারটির মধ্যে দুটি ইউনাইটেড এয়ার এবং রিজেন্ট এয়ার আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালালেও দেনা আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে ধুঁকতে হচ্ছে তাদের।

গত সোমবার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর পদত্যাগের পর চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের।

দুই দিন পর তাসবিরকে ফিরিয়ে এনে পুনরায় ফ্লাইট শুরু করলেও বেবিচকের কাছে ৮৪ কোটি টাকা দেনা এবং আর্থিক অবস্থা মিলিয়ে কতদিন তা নিরবচ্ছিন্ন থাকে, তা নিয়ে সংশয় সংশ্লিষ্টদের। 

রিজেন্ট এয়ারওয়েজও ভুগছে দেনার দায়ে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তাদের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা পায়।

গত ১৭ বছরে বিভিন্ন মেয়াদে ফ্লাইট পরিচালনা করে বন্ধ হয়ে গেছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়েল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স ও বেস্ট এয়ার। এদের মধ্যে শুধু জিএমজি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাত।

এছাড়া বর্তমানে দুটি বেসরকারি বিমান সংস্থা সচল রয়েছে। তবে অল্প কিছু দিন আগে যাত্রা শুরু করা নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা শুধু অভ্যন্তরীণ রুটেই ফ্লাইট চালায়।   

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়মানুসারে কোনো বিমান সংস্থাকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানোর জন্য আভ্যন্তরীণ রুটে অন্তত এক বছর ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের সাবেক একজন কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে অন্য একটি বিমান সংস্থায় কাজ করছেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুরুর দিকে জিএমজি ভালোই চলছিল। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং আরো কিছু সমস্যার কারণে পরে আর ব্যবসা চালানো সম্ভব হয়নি।” 

ইউনাইটেড এয়ারকে তাদের ৮৪ কোটি টাকা দেনা তিন বছরে তিন কিস্তিতে শোধ করতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বেবিচক পরিচালক (ফ্লাইট সেফিটি এন্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম জানিয়েছেন।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১১টির মধ্যে ছয়টি উড়োজাহাজকে সি-চেক করতে বলেছে বেবিচক। সি-চেক সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ উড়োজাহাজগুলো যাত্রী নিয়ে উড়াল দিতে পারবে না।

এভিয়েশনের পরিভাষার, নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে রক্ষনাবেক্ষণ প্রয়োজন। এ রক্ষণাবেক্ষণের একটি হল সি-চেক।

রিজেন্টের চারটি উড়োজাহাজের মধ্যে একটি উড়োজাহাজ সি-চেকের জন্য গ্রাউন্ডেড অবস্থায় রয়েছে। 

রিজেন্ট বেবিচকের কাছে তাদের দেনা ২৪ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বলে কোম্পানির ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশনস বিভাগের ব্যবস্থাপক এস এম রিয়াজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন, যাদের প্রায় সবাই নিয়মিত উড়োজাহাজে করে যাওয়া-আসা করেন।

এই বিপুল পরিমাণ যাত্রীকে আকর্ষণ করতে না পারার কারণ হিসেবে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, সরকারের ট্যাক্স, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের উচ্চ মূল্যকে দায়ী করছে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো।

রিজেন্ট কর্মকর্তা রিয়াজুল বলেন, “এভিয়েশন ব্যবসা সম্পর্কে বেশিরভাগ ব্যাংকের ভালো ধারণা না থাকায় তারা ঋণ দিতে চায় না।

“এরপর রয়েছে সরকারের বিভিন্ন ট্যাক্স। ধরা যাক, ঢাকা থেকে ব্যাংকক ফ্লাইটের একটি টিকিটের মূল্য ন্যূনতম ২৭ হাজার টাকা। এই টাকায় সরকারের ট্যাক্স ৫ হাজার টাকা। এরপরে অন্যান্য এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যারোনটিক্যাল ফি তো আছেই।”

পৃথিবীর সব দেশই নিজ দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর কাছে এ চার্জ অনেক কম নিয়ে থাকে বলে দাবি করেন রিয়াজুল।

“আমাদের গড় লোড ফ্যাক্টর ৭০ ভাগ। এরপরেও এসব কারণে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়।”

‘লোড ফ্যাক্টর’ হল কোনো উড়োজাহাজে আসনের বিপরীতে যাত্রীর অনুপাত। ‘লোড ফ্যাক্টর’ ৭০ ভাগ মানে হল প্রতি ১০০টি আসনের বিপরীতে ৭০ জন যাত্রী ভ্রমণ করছেন।

এভিয়েশন ব্যবসার ক্ষেত্রে ‘লোড ফ্যাক্টর’ ৬০ ভাগ হলে তাকে লাভজনক বলে ধরা হয়। 

বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসা ১৭টি বিদেশি এয়ারলাইন্স যাত্রী পেলেও দেশি সংস্থাগুলো যাত্রী না পাওয়ার কারণ হিসেবে ‘ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার অভাব’কে চিহ্নিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য এবং এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা এ ব্যবসার সাথে যুক্ত হতে আসছেন এদের বেশিরভাগই ব্যবসাটিকে বুঝতে পারেন না। তাই তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা সব সময়ই দুর্বল থাকে।

“বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তাদের আয় ও ব্যায়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। কোন উড়োজাহাজ কোন রুট চালালে তাতে লাভ হবে, বেশিরভাগই এটা বুঝতে পারেন না।”