ব্যাংকের অযোগ্য পরিচালকদের সরানোর পক্ষে গভর্নর

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের চার দিনের মাথায় অদক্ষ পরিচালকদের বিদায় করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2014, 04:34 PM
Updated : 22 Sept 2014, 04:34 PM

সোমবার এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আতিউর রহমান স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সৎ, যোগ্য ও পেশাজীবীদের নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শও দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের (এফআইসিএসডি) ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার, নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান, উপকারভোগী কয়েকজন গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আতিউর রহমান বলেন, “ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে গ্রাহকের আস্থা সবচেয়ে বড় বিষয়। আমরা ব্যাংকিং খাতকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। গতকয়েক বছরে কমপক্ষে ২০টি সংষ্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যেও দু’একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

গভর্নর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সেবার মান বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।

এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “আমরা আশা করব, সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক সেবা সম্পর্কিত গাইডলাইন অনুযায়ী চলবে। ব্যাংকগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে গুড কমপ্লায়েন্স, গুড সার্ভিস, গুড বিজনেস দেবে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংককেও সুপারভিশন, মনিটরিং, রেজুলেশন, পলিসি শক্তিশালী করতে হবে।”

গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে এবিবির সভায় আলোচনার আশ্বাস দেন এর চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার পক্ষে থাকলেও নানা আর্থিক কেলেংকারির প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছেন।

গত বৃহস্পতিবার তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি ব্যাংকে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

বাড়ছে অভিযোগ

অনুষ্ঠানে এফআইসিএসডির ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার সাহা।

এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ বেড়েই চলেছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকগুলোর চার হাজার ৪৭৬ জন গ্রাহক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ১৮০টি বেশি।

ওই অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল চার হাজার ২৯৬টি।

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে ট্রেড বিল সংক্রান্ত, যা মোট অভিযোগের ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ, মোট অভিযোগের ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া ঋণ ও অগ্রিম, রেমিটেন্স, মোবাইল ব্যাংকিং, ডেবিট, ক্রেডিট ও এটিএম কার্ড বিষয়ক অভিযোগ রয়েছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৯১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

স্বপন কুমার সাহা জানান, অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে এফআইসিএসডির কর্মকর্তারা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট অভিযোগের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র ১০টি ব্যাংকের গ্রাহকরা করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযোগের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের তালিকাও করেছে।

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সোনালী ব্যাংক থেকে। এরপরই রয়েছে জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের নাম।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের গ্রাহকরা।  এরপরই রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে। শীর্ষ ১০০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৫১৩টি অভিযোগ এসেছে।

গ্রহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১৮৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এর মধ্যে ১৮ জন মহাব্যবস্থাপক বা এর ওপরের পদে ছিলেন। এছাড়া আরও দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

ব্যাংকের গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশে ২০১১ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক হেল্প ডেস্ক চালু করে, যা পরের বছর জুলাই মাসে একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে যাত্রা করে। এর নাম দেওয়া হয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট।

এই বিভাগ গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিস্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে অথবা প্রয়োজন হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

এই সেবা চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে ১০ হাজার ৮০৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।