৫ হাজার কোটি টাকা শোধে ১২ বছর চেয়েছে বেক্সিমকো

নিজেদের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস বিভাগের কাছে সাত ব্যাংকের পাওনা ৫ হাজার কোটি টাকা দেনা পরিশোধের শর্ত সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ‘পুনর্গঠনের’ এক প্রস্তাব পাঠিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2014, 05:43 PM
Updated : 27 August 2014, 05:43 PM

আর বেক্সিমকোর এই প্রস্তাব পেয়ে ওই সাতটি ব্যাংকের মতামত জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং তিনটি বেসরকারি।

৫ হাজার কোটি টাকা দেনা পরিশোধে ১২ বছর সময় চেয়ে গত ৫ অগাস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি দেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।

তার দেয়া প্রস্তাবে ১২ বছর সময় চাওয়া ছাড়াও আড়াই বছরের জন্য কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা স্থগিত এবং সুদের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার আবেদন জানানো হয়।

এ বিষয়ে একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতামত ও সংশ্লিষ্ট নথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দিয়েছে গ্রুপটি।

এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৯ অগাস্ট রাষ্ট্রায়ত্ত্ চারটি সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা এবং ও বেসরকারি তিনটি ন্যাশনাল, এক্সিম ও এবি ব্যাংকের কাছে বিষয়টি নিয়ে মতামত চেয়েছে।

কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, এর আগে এরকম ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিল দেশের আরেকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইসলাম গ্রুপ।

চলতি মূলধন সংকটে পড়া কোম্পানিকে বিদেশেও এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে কী কী যুক্তিতে তখন সেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা জানতে সে সময়কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাউকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি।

গভর্নর আতিউর রহমানকে দেয়া চিঠিতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমান লিখেছেন, “গত তিন বছরে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছে। এর ফলে গ্রুপের চলতি মূলধনের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে এবং বেক্সিমকো লিমিটেড চরম তারল্য সংকটে মোকাবিলা করায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর টিকে থাকার জন্য ঋণের সঠিক পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন।”

‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ প্রণয়নের জন্য একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয় বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০ জুন পর্যন্ত বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ডিভিশনের ঋণের স্থিতি একীভূত করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরিশোধের জন্য পুনঃতফসিলীকরণ, কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আড়াই বছরের জন্য স্থগিত এবং সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

সালমান রহমান নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের বরাত দিয়ে চিঠিতে বলেছেন, “ঋণের বর্তমান শর্ত অব্যাহত থাকলে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ডিভিশন খেলাপি হয়ে যাবে। অপরদিকে প্রস্তাব বিবেচনা করলে খেলাপিমুক্ত হয়ে দেনাও পরিশোধ হবে।”

চিঠিতে বলা হয়, বেক্সিমকো গ্রুপের মধ্যে বেক্সিমকো (টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস) হলো দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ও পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান।

টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ছাড়াও সিরামিক, ওষুধ, পাটসহ অন্যান্য খাতে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার কর্মী। অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত আরো প্রায় দুই লাখ মানুষ। গত ১০ বছরে গ্রুপটি দেড় বিলিয়ন ডলারে পণ্য রপ্তানি করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

সালমান এফ রহমান গভর্নরকে আরো লিখেছেন, “রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ গ্রহণে বাধা দেয়াসহ ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এতে প্রায়ই গ্রুপটিকে চলতি মূলধন সংকটে পড়তে হচ্ছে।

“২০০৯ সাল থেকে গ্রুপটির বিভিন্ন কোম্পানি ঋণ শোধ করেছে। এটা যে আমাদের যথেষ্ট অর্থ প্রবাহ কিংবা সামর্থ্যের কারণে করেছি তা নয়; মূলত এটা আমরা করেছি ঋণ খেলাপি হওয়া এড়ানোর জন্য। এটা অস্থায়ী একটা সমাধান ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আয় ও কিস্তি পরিশোধের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়েছে।”