বেনাপোল দিয়ে কমছে আমদানি

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে গত অর্থবছরে ২ লাখ ১২ হাজার ৬৭০ দশমিক ৭ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2014, 03:52 AM
Updated : 22 August 2014, 03:52 AM

শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতালসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আমদানি কম হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

২০১২-২০১৩ অর্থবছরের আমদানি হয়েছিল ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৭৩ টন পণ্য। আর ১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭০২ দশমিক ৬ টন পণ্য।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে এখন স্বাভাবিক অবস্থা থাকলেও ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। এতে আমদানি পণ্য এনে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

সেই সঙ্গে বন্দর শেড থেকে পণ্য চুরি, শুল্ক কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে অনেকে এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাওয়ায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে।

বেনাপোল শুল্ক ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ৭১ হাজার ২৫৫ দশমিক ৪১ টন, অগাস্টে ৩৯ হাজার ৭৮৬ দশমিক ২৮ টন, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৩ হাজার ৪৭৯ দশমিক ৯০ টন, অক্টোবর মাসে আমদানি হয়েছে ৫৭ হাজার ৩২৭ দশমিক ৫৭ টন, নভেম্বর মাসে ৫৬ হাজার ৭৩৬ দশমিক ৯৯ টন, ডিসেম্বর মাসে ৪৮ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৪২ টন, জানুয়ারি মাসে ৬২ হাজার ৭৫৩ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন, ফেরুয়ারি মাসে আমদানি করা হয়েছে ৬০ হাজার ৬৩৬ দশমিক ১৯ টন পণ্য, মার্চ মাসে আমদানি হয়েছে ৮০ হাজার ৩৮৯ দশমিক ৫৬ টন, এপ্রিল মাসে আমদানি হয়েছে ৭৮ হাজার ৪৮৭ দশমিক ১৬ টন, মে মাসে ৬৮ হাজার ১২১ দশমিক ০১ এবং জুন মাসে হয়েছে ৫৬ হাজার ২৬৫ দশমিক ৭৮ টন পণ্য।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, বন্দর থেকে মালামাল চুরি, কাস্টমের হয়রানিসহ বিভিন্ন কারণে অনেক আমদানিকারকরা বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে। এই কারণে দিন দিন বেনাপোল থেকে মালামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। আবার দেশে ব্যবসায়ীক মন্দার কারণেও আমদানিকারকরা পণ্য আনা কমিয়ে দিয়েছেন।
কিছুটা ভিন্নমত দিয়েছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক হুমায়ন কবীর কবু।
তিনি বলেন, “আমদানি কম হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজ করলেও আমাদের এবার কৃষি পণ্যের ভালো ফলন হয়েছে। যেকারণে কৃষি পণ্য আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। মূলত একারণে এবার বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কম হয়েছে।”
বেনাপোল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মহাসিন মিলন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেনাপোলে অব্যাহত প্রতিকূল পরিবেশ থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা চায় দ্রুত পণ্য খালাস। দেরি হলে তাদের মাশুল গুণতে হয়।
অবশ্য শুল্ক বিভাগের হয়রানি এই বন্দরের বড় সমস্যা বলে মনে করেন বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, বেনাপোল বন্দর কথায় কথায় এক শ্রেণির শ্রমিক অচল করে দেয়। এতে দেশের আমদানিকারকরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বারবার হরতাল, অবরোধ, শ্রমিক বিক্ষোভের জন্য বন্দর হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এসব প্রতিকূল পরিবেশ দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমদানিকারকদের ধরে রাখা যাবে না।
শুল্ক বিভাগের হয়রানির কথা অস্বী^কার করে বেনাপোল শুল্কভবনের যুগ্ম কমিশনার (১) ফাইজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর হরতালের প্রভাব ছিল বেশি। তাছাড়া দেশে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তারা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছেন না। যে কারণে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে পন্য আমদানি কিছুটা কমেছে।
বন্দর থেকে মালমাল চুরি প্রসঙ্গে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে বন্দরের শেড থেকে ব্যবসায়ীদের মালামাল চুরি হতো। তবে এখন অনেক কমে গেছে। এখানে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যেখানে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন আছে। এসব লোকদের ধরলে তারা আন্দোলনে যায়।
“তাছাড়া বন্দরের বাইরে থেকে মালামাল চুরি হলে আমাদের কিছু করার নেই। যেখান থেকে চুরি হোক আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারক। তাই আমরা পণ্য চুরি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।”