বছরে দুটি নতুন মডেলের গাড়ি আনবে টাটা

বিশ্ববাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রতিবছর দুটি করে নতুন মডেলের গাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে ভারতের সবচেয়ে বড় মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটা মটরস।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2014, 11:12 AM
Updated : 22 August 2014, 12:14 PM

বুধবার বাংলাদেশের বাজারে ছোটো গাড়ি ‘ন্যানো’ ব্র্যান্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসা টাটার হেড অফ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস জনি ওমম্যান এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে আট লাখ টাকায় ন্যানো বাজারজাত করছে নিটল মটরস। ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের পর বাংলাদেশে ন্যানো বিক্রি শুরু হল।

রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে ন্যানোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ফাঁকে জনি ওমম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে চলা মানুষের ক্রয়ক্রমতা বাড়াবে বলে তারা মনে করছেন।

“বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েকবছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাড়ছে মাথা পিছু আয়।”

“এছাড়া এদেশের নতুন নতুন খাতে কর্পোরেট কালচার চালু হয়েছে। ফলে বাজারে নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভব হলে এবছরই আরেকটি ব্র্যান্ড বাংলাদেশের বাজারে চালু করা হবে।”

এর আগে বুধবারই ভারতের বাজারে সেডান জেস্ট গাড়ির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববাজারে প্রতি বছর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অন্তত দুটি মডেলের নতুন গাড়ি ছাড়ার ঘোষণা দেন টাটা মটরসের প্যাসেঞ্জার ভেহিকেল বিভাগের প্রেসিডেন্ট রঞ্জিত যাদব।

ন্যানো নিয়ে টাটা মটরসের কর্ণধার রতন টাটা

তিনি জানান, গত বছর টাটা পাঁচটি ব্র্যান্ডের ৮ মডেলের গাড়ি বাজারে এনেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর দুটি করে গাড়ি বাজারে আনবে।

জনি ওমম্যান বলেন, “বাংলাদেশে নিটল মটরস আমাদের প্রায় ২৫ বছরের ব্যবসায়ী অংশীদার। আপাতত এখানে তাদের বাইরে অন্য ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল নিয়ে আমরা ভাবছি না।”

ভারতে ট্রাক, লরি এবং বাস বিক্রিতে টাটার অবস্থান শীর্ষে থাকলেও, প্রাইভেট কারের বাজারে তাদের অবস্থান পঞ্চম। এই বাজারে টাটা মটরস সেদেশের প্রতিষ্ঠান মারুতি ও মহেন্দ্র অ্যান্ড মহেন্দ্র এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিয়ন্দে ও হোন্ডার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে।

২০০৯ সালে বাজার ধরতে কম দামী ও কম খরচের গাড়ি ‘ন্যানো’ বাজারে নিয়ে আসে টাটা। কিন্তু সড়কে নামার পর কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ে বিপণনে। ফলে প্রথমবারের মতো গাড়ি কিনছেন এমন ভারতীয় ক্রেতাদের ন্যানো আকর্ষণ করতে পারেনি বলেই বাজার বিশ্লেষকদের মত।

বাজার ধরতে না পারায় গুজরাটে আড়াই লাখ গাড়ি উৎপাদনে সক্ষম টাটা ন্যানোর কারখানাটি কখনোই পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারেনি। ২০১৩-১৪ সালে টাটা ন্যানোর বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১২৯টি, যা তার আগের বছরের বিক্রির চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

২০১২-১৩ সালে মোট ৫৩ হাজার ৮৪৮টি ন্যানো বিক্রি করেছিলো টাটা। ভারতের মোট ১ লাখ ২০ হাজার ন্যনো বিক্রি হয়েছে। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বিক্রির সংখ্যা ৬ হাজার।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশেই ন্যানো তৈরির পরামর্শ দেন।

এ প্রসঙ্গে জনি বলেন, “বাংলাদেশে এখনি অ্যাসেম্বলিং করার কথাও ভাবছি না। তবে হ্যাঁ আমরা যদি দেখি বাংলাদেশে বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজারটি ন্যানোর চাহিদা রয়েছে, তাহলে তা করা যেতে পারে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মূলত পুরনো গাড়ির বাজার। এখানে নতুন গাড়ির সর্বোচ্চ চাহিদা বছরে ২০ হাজারটি। যে কারণে সময় লাগবে।”

জনি ওমম্যান

টাটা এই বাজারে প্রতিবছর ২৫০০ থেকে ৩০০০টি ন্যানো গাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান ওমম্যান।

“আমরা শুরুতে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ২৫০টি গাড়ি বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছি।”

“তবে এসব পরিকল্পনাই নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের আমদানি শুল্ক নীতির ওপর। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের জন্য যে ধরনের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা আছে তাতে নতুন গাড়ি দামে আকর্ষণীয় হওয়াটা সহজ নয়।”

১৯৫৪ সালে যাত্রা হয় ভারতের শীর্ষ এবং বিশ্বের ষষ্ঠ সর্ববৃহৎ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটার। বর্তমানে ভারতের সড়কে ৮০ লাখের বেশি টাটার তৈরি বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।

ভারতে মার্চ থেকে শুরু চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-মে) টাটা মটরসের নিট মুনাফার পরিমাণ ছিলো প্রায় পাঁচ হাজার চারশ’ কোটি রুপি, যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি।