সাগরে এক কোম্পানিকে বেশি ব্লক নয়: হাসিনা

সাগরে খনিজ সম্পদ আহরণে এক কোম্পানিকে ‘বেশি’ ব্লক বরাদ্দ না দেয়ার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে নতুন করে দরপত্র ডাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 11:32 AM
Updated : 20 August 2014, 01:49 PM

সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ ও অ্যাকশন প্লান প্রণয়ন বিষয়ক সভায় তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সমুদ্রসীমায় তেল ও গ্যাস আহরণের জন্য নতুনভাবে বিডিংয়ের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘একটি কোম্পানিকে বেশি ব্লক দেয়া যাবে না’।”

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) প্রণয়নের পর ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ব্লকগুলো বাদ রেখে গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ১২টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র ডাকে পেট্রোবাংলা।

এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রের এসএস-০২ থেকে এসএস-০৪ ও এসএস-০৬ থেকে এসএস-১১ ব্লকের জন্য দুই দফা দরপত্র ডাকা হয়। তারপরও চারটি ব্লকের জন্য তিনটি কোম্পানি দরপ্রস্তাব জমা দেয়।

এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তিনটি ব্লক থেকে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ভারতের ওএনজিসি এবং অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক যৌথ কোম্পানি স্যান্টোস সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেড ও ক্রিশ এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা।  

কিন্তু গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ ব্লকের জন্য তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রস্তাব না পেয়ে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করে পেট্রোবাংলা। ঠিকাদারদের দাবি অনুযায়ী শর্ত শিথিলের জন্য পিএসসি সংশোধন করা হয়।

এই তিন ব্লকের জন্য বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। তিনটি ব্লকেই একমাত্র দরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের কনকো ফিলিপস। 

এছাড়া গভীর সমুদ্রের ব্লক ডিএস ১০ ও ডিএস ১১ থেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ২০১১ সালে কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

বর্তমানে চারটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদেশি শেভরন ও তাল্লো দেশের মোট গ্যাসের ৫৪ শতাংশ সরবরাহ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, নৌ পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অংশ নেন।

নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

শামীম চৌধুরী বলেন, “সমুদ্রসীমা থেকে সম্পদ আহরণ করে কিভাবে তা জনগণের কাজে লাগানো যায়- সেজন্যই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

মিয়ানমারের পর এই বছর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর সম্পদ আহরণের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে গবেষকরা বলছেন।

গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কী কী সম্পদ রয়েছে তা নিশ্চিত করতে বৈঠকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সমুদ্র সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ-বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেয়ার কথাও বলেন সরকার প্রধান।

সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণ, জরিপ ও গবেষণার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জরিপ ও গবেষণা একসাথে চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রেসসচিব জানান। গভীর ও অগভীর জলসীমায় দু’ধরনের জরিপ চালাতেও বলেছেন তিনি।

একই সাথে জলসীমার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শামীম চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রের সকল প্রাণীজ সম্পদ আহরণের কথা বলেছেন।”

সমুদ্রে জেগে ওঠা চর বনায়নের মাধ্যমে বসবাসের যোগ্য করে তুলতেও বলেছেন শেখ হাসিনা। সমুদ্র পর্যটনের বিকাশে পাশের দেশগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে বৈঠকে নৌবাহিনী প্রধান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ম্যারিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব, জ্বালানী সচিব, নৌ-পরিবহণ সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্পারসো চেয়ারম্যান, সার্ভেয়ার জেনারেল এবং পরমাণু কমিশনের চেয়ারম্যান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।