এবার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৪.৫ বিলিয়ন ডলার

ব্রাজিল, রাশিয়াসহ ‘ব্রিকস’ জোটভুক্ত পাঁচ উদীয়মান অর্থনীতির দেশে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তিন হাজার ৪৫০ কোটি (৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2014, 03:41 PM
Updated : 20 July 2014, 03:57 PM

এর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকেই ২৯ বিলিয়ন ডলার আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সোমবার এক সভায় এই লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু জানান।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ অন্যান্য খাতের প্রতিনিধি, অর্থমন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এই সভায় উপস্থিত থাকবেন।

শুভাশীষ বসু বলেন, “সব খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আগামী অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে।”

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা বাধা বিপত্তির পরও গত অর্থবছরে রপ্তানি খাতে প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আরও বেশি, ১৪ শতাংশের মতো।

ফাইল ছবি

দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ‘অর্জন’ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“নতুন অর্থবছরের রপ্তানি নিয়ে রোববার বিজিএমইএ অফিসে আমরা বৈঠক করেছি। ‘ব্রিকস’ জোটভুক্ত দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে ওই পাঁচ দেশে মেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত এই জোট সম্মিলিতভাবে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ জিডিপির অধিকারী।

আতিকুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরের মধ্যে এসব দেশে বাংলাদেশি পোশাকের মেলার আয়োজন করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারেও রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানি থেকে প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে বাংলাদেশ।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার আয় করে।

চলতি অর্থবছরে উভেন পোশাক পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৫ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো।

এছাড়া হিমায়িত মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াসহ অন্যান্য খাত থেকে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত অর্থবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ।

এর মধ্যে নিট পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আর উভেন পণ্যে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

‘ব্রিকস’ জোটভুক্ত দেশগুলো সম্প্রতি ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি উন্নয়ন ব্যাংক ও জরুরি মুদ্রা তহবিল গঠনের চুক্তি করেছে, যার সদরদপ্তর হবে চীনের সাংহাইয়ে।

এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, এসব দেশে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

“ভারতে কিছু পোশাক রপ্তানি করছি আমরা। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তৈরি পোশাকের ভাল বাজার রয়েছে। এসব বাজারে ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারলে আমাদের রপ্তানি অনেক বাড়বে।”

সরকারের সহায়তা এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও আশা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।