সহসাই চালু হচ্ছে না ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট

উড়োজাহাজ ভাড়ার পদ্ধতিগত ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ হওয়ায় বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটের ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে চালু করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

আশিক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2014, 04:03 PM
Updated : 19 July 2014, 04:03 PM

প্রায় ১৮ বছর বন্ধ থাকার পর ভাড়া করা বিমান দিয়ে এই রুটে বিমানের ফ্লাইট জুন মাস থেকে আবার চালুর কথা এবছরের শুরুতে জানিয়েছিলেন বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল।  

কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, উড়োজাহাজ ভাড়া করার পদ্ধতি ‘সংশোধন’ করতে না পারায় এই রুটে বিমানের ফ্লাইট সহসা শুরুর কোনো আশা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নে বাংলাদেশ বিমানের নিরাপত্তা মানের অবনমন ঘটায় ১৯৯৬ সালে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার যোগ্যতা হারায় প্রতিষ্ঠানটি।  দীর্ঘ সময় পর গত বছরের অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা একটি সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, যোগ্য কোনো সংস্থার উড়োজাহাজ ‘যথাযথ’ প্রক্রিয়ায় ভাড়া করে নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বিমান।

কিন্তু, বিমান যথাযথ পর্যালোচনা ছাড়াই জানুয়ারিতে মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া করে ‘ড্রাই লিজ’ পদ্ধতিতে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুমোদিত নয়।  এর পর ড্রাই লিজ থেকে ভাড়ার পদ্ধতি অনুমোদিত ‘ওয়েট লিজে’ রূপান্তর করার কথা থাকলেও সেই চেষ্টায়ও সফল হতে পারেনি বিমান।

এখন নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালু করতে বিমানকে অনুমোদিত কোনো বিমান সংস্থার সঙ্গে নতুন চুক্তি করে ‘ওয়েট লিজ’ পদ্ধতিতে উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে হবে।  সেজন্য এর মধ্যে বিমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরপত্র আহ্বান করলেও তা সময়সাপেক্ষ।

এবিষয়ে বিমানের ভারপ্রাপ্ত এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিউ ইয়র্কে যাওয়ার জন্য অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছি। সেখানে চালানোর মতো উড়োজাহাজও বর্তমানে আমাদের কাছে আছে।  আমরা যেতে পারছি না কারণ আমরা এখনও ক্যাটাগরি ২।

“এখন আমাদের কাছে অপশন হচ্ছে ক্যাটাগরি ১ কোনো দেশের কাছ থেকে ওয়েট লিজে উড়োজাহাজ ভাড়া করে ফ্লাইট শুরু করা। এর জন্য একটি আরএফপি করেছি সেটার রেসপন্সও পাচ্ছি। এগুলো ইভাল্যুয়েট করে দেখা হচ্ছে।”

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশের উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালাতে হলে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র দরকার হয়।

এফএএর মূল্যায়নে বাংলাদেশ বিমান ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-২তে নেমে যাওয়ায় ১৯৯৬ সালে বিমানের ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৩ সালের ১৭ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে বাংলাদেশ।  তাতে এফএএ এর নিরাপত্তা নিরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত উড়োজাহাজের যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।  তবে তবে ক্যাটাগরি ১ ছাড়পত্রধারী কোনো দেশে থেকে উড়োজাহাজ ওয়েট লিজ পদ্ধতিতে ভাড়া করে ফ্লাইট চালুর সুযোগ দেওয়া হয়।

এর পরই মিশরের ইজিপশিয়ান এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ড্রাই লিজ পদ্ধতিতে ভাড়ায় আনে বিমান।  গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ রুটের টিকেটও ছাড়া হয়।

বিমান চলাচলের পরিভাষায় দুই ধরনের লিজ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে ড্রাই লিজ পদ্ধতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ভাড়ায় উড়োজাহাজ আনা হয়, যাতে উড়োজাহাজের ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণসহ সব সেবা ভাড়াগ্রহিতার দায়িত্বে থাকে। অন্যদিকে ওয়েট লিজ নামের স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতিতে উড়োজাহাজের ক্রু ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্য সব সেবা ভাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকে।

বিমানের এমডি মোসাদ্দেক বলেন, “মিশর থেকে যে দুটো উড়োজাহাজ আনা হয়েছে, সেগুলো ড্রাই লিজে আনা। তাই এগুলো আমরা এ রুটে চালাতে পারছি না।”

এ ধরনের ‘অপেশাদার’ কর্মকাণ্ডের জন্য ভবিষ্যতে বিমানকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য এবং এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমান চলাচল ব্যবসা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলে কেউ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যারা লিজ নিয়ে যারা এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের এখনি চাকুরিচ্যুত করা উচিত।

“যে দুটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ড্রাই লিজে আনা হয়েছে এগুলো এখন স্বল্প পাল্লার দূরত্বে চালানো হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে ড্রাই লিজে আনা উড়োজাহাজ যে কন্ডিশনে আনা হয় সেভাবেই ফেরত দিতে হয়। এগুলো ফেরত দেয়ার আগে যখন ভারি মেরামত করা হবে তখন যে অতিরিক্ত খরচ হবে তা হবে কয়েক মিলিয়ন ডলার।

“বিমানের উচিত হবে এগুলো এখনি ফেরত দিয়ে দেয়া। হয়তো এর জন্য বিমানকে কিছু অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে কিন্তু অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে।”