রপ্তানি বাড়াতে ভারতীয় বিনিয়োগ টানতে হবে: সিপিডি

ভারতে রপ্তানি বাড়াতে দেশটির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 04:59 PM
Updated : 22 April 2014, 04:59 PM

পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দরগুলোর সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের অশুল্ক বাধা দূর করার কথাও বলেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে এই মত তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ভারতে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সহজীকরণের নানা দিক তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ভারতে রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনের খাতগুলোতে ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেও বাণিজ্য সহজীকরণ করতে হবে।

ভারতের বাজারে বাংলাদেশের কিছু তৈরি পোশাক পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও তাতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে না মনে করেন তিনি।

“আমরা মনে করি, এর সাথে সাথে বাংলাদেশকে বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ৯০ ভাগ স্থলবন্দর দিয়ে হয় উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর বলেন, “কিন্তু এতো বড় বাণিজ্যের জন্য বন্দরগুলোর যে উন্নয়নের দরকার ছিলো তা হয়নি।

স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, অয়্যারহাউজ ফ্যাসিলিটি বাড়ানো, কোল্ডস্টোরেজ ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত নথিগুলো ইলেকট্রনিক্যালি জমা দেয়ার কথা বলেন তিনি।

“এগুলো হলে বাণিজ্য করার খরচ অনেক কমে আসবে এবং ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়বে। আমদানির জন্যও এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না থাকায় আমদানি-রপ্তানিতে খরচ বেশি পড়ে।

“শূন্য শুল্কসুবিধার সাথে লজিস্টিক, বাণিজ্য সহজীকরণ ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পূরকভাবে করতে পারলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা ভারতের বাজারে সৃষ্টি হয়েছে তা আরও বাড়ানো যাবে।”

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার‌্য বলেন, উদ্যোগহীনতা, ধারাবাহিকতার অভাব ও সরকারের ভেতরে সমন্বয়ের অভাবে ভারত সরকার বাংলাদেশের রপ্তানিতে যে সুবিধা দিয়েছে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি করতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ২১টি ডকুমেন্টেশন করলেই হয়। কিন্তু ভারতে রপ্তানি করতে ডকুমেন্টেশন দরকার হয় ৭৫টি।

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহানের পরিচালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এছাড়াও ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সিলার বিজয় সেলভারাজ বক্তব্য রাখেন।

আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা ও মান বাড়াতে হবে। তা না হলে ভারতের বাজার পাওয়া সহজ হবে না।”

আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন,“ভারতের অনেক বিনিয়োগকারি বাংলাদেশে আসতে চান। কিন্তু শিল্পের জন্য জমি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় তারা আসছে। এসব উদ্যোক্তারা আসলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়তো।”

তিনি ওইসব প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গোয়াহাটি ও চেন্নাইয়ে ডেপুটি হাই কমিশন খোলার উদ্যোগ এরমধ্যে অন্যতম। এই দুটো ডেপুটি হাই কমিশন ভারত সরকারের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

“এছাড়া দুই সেট ট্রেনের পরিবর্তে চার সেট ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা, কন্টেইনার ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামীতে দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে, যার ফলে বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে উভয় দেশ উপকৃত হবে।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “তবে ভারতের সঙ্গে যে কোনো বিষয় আসলেই তা রাজনৈতিক খেলার অংশ হয়ে যায়। ভারতের কথা আসলেই কিছু রাজনৈতিক দল, কিছু গোষ্ঠী সমালোচনা শুরু করে।”

সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক বাণিজ্য সচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।