রেটিংয়ে বিএসইসির উন্নতিতে বিনিয়োগ বাড়ার আশা প্রধানমন্ত্রীর

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনস অফ সিকিউরিটিজ কমিশনের রেটিংয়ে বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2014, 10:49 AM
Updated : 26 Feb 2014, 11:57 AM

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসলে তিনি এ আশাবাদের কথা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “এক্সচেঞ্জ কমিশনের রেটিং এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজ হবে।”

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এসএসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ ক্যাটাগরিতে আসায় আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মনোভাব থাকলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”

সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়- জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দশ বছর আগেই ২০৩১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।”

এসএসির দশ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ (২০১২-২০২২) বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক, স্থিতিশীল, টেকসই ও যুগোপযোগী পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগ, বরখাস্ত, ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা সংশোধীত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার এবং প্রত্যেক পরিচালক কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবেন  মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।”

এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন প্রণয়ন এবং ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর ফলে এক্সচেঞ্জগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা থেকে লেনদেনের অধিকার পৃথক করা হয়েছে।”

এসএসির অর্জনের পেছনে গত পাঁচ বছর পুঁজিবাজার সংস্কারে সরকারের নেয়া ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সংস্কার বলা যতো সহজ, কাজের বেলায় ততো সহজ না।”

পুঁজিবাজারের জন্য নতুন আইন প্রবর্তন, বিদ্যমান আইন সংস্কার, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত, এসএসিকে শক্তিশালী ও নতুনভাবে কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং এর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিশন নিজস্ব বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতা পেয়েছে। স্টকএক্সচেঞ্জ সমূহের পরিচালনা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা হয়েছে।
 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমান অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ আরো উন্নতি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে কাজ শুরু করেছিলাম তা শেষ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের ভৌগলিক অবস্থান এমন জায়গায় যে আমরা দেশকে উন্নত করতে পারবো।”

বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকগুলো তুলে ধরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।”

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস এবং মুডিস গত চার বছর ধরে বাংলাদেশের ঋণমান অপরিবর্তিত রেখেছে বলে জানান তিনি।

লানি লন্ডারিংয়ে বাংলাদেশ গ্রে তালিকাভুক্তির বাইরে আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে। আমরা দুর্নীতি হ্রাস করেছি। সে ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। মানি লন্ডারিংয়ে বাংলাদেশ গ্রে তালিকাভুক্ত ছিল। এখন তা নেই।”

দেশের সার্বিক উন্নয়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। আমরা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে সরকার পরিচালনা করিনি। আমরা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। এজন্য অনেক কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি। শক্ত অবস্থান নেওয়ায় আমরা মর্যাদার আসনে দাঁড়িয়েছি।”
গত বছর শেষ তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতে আন্দোলনে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। রাজনৈতিক অবস্থা চিরাচরিত। সেটা থাকবে। অনেক বাধা দিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা পারে নাই। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর তিন মাস ক্ষতি গেছে। তার উত্তরণ ঘটাতে পারবো।”
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এসএসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন ডি-মিউচ্যালাইজেশন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ায় কথা তুলে ধরে বলেন, “পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করে শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব।”
পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে পারলে ২০৩১ সালেই উন্নত দেশ হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান, মুখ্যসচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, এসএসির কমিশনার, পরিচালক এবং উপ-পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।