হ্যাকিং: সোনালী ব্যাংকের ২ কোটি টাকা উধাও

ঋণ নিয়ে হাপিস, সিঁদ কেটে চুরির পর এবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের দুই কোটি টাকা লোপাট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2014, 01:26 PM
Updated : 22 Feb 2014, 01:26 PM

সরকার মালিকানাধীন বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটি থেকে অর্থ উধাও হওয়ার এই খবর শনিবার দিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম।

সোনারগাঁও হোটেলে ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি যখন এই তথ্য দেন, তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এবং সচিব দুজনই সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আসলাম আলম বলেন, “গত বছর ব্যাংকটির একটি হিসাবের পাসওয়ার্ড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে একটি ট্রান্সজেকশনে আড়াই লাখ ইউএস ডলার ক্ষতি হয়েছে।”

“এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ব্যাংকটির পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্টে বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বলতে কিছুই নেই ব্যাংকটির।”

হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকটির কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে সম্প্রতি সিঁদ কেটে চুরি হয়।

হল-মার্ক গ্রুপ আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। কিশোরগঞ্জে চুরি হওয়া টাকার অধিকাংশ অবশ্য উদ্ধার হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা তুলে ধরতে গিয়ে সচিব কিশোরগঞ্জের ঘটনাটিও তুলে ধরেন।

“কিশোরগঞ্জে ব্যাংকের শাখায় সুড়ঙ্গ কেটে চুরির যে ঘটনা ঘটেছে, এর আগে বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। ৫ মে রাতে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে হাজার হাজার লোক ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু এর কোনো ভিডিও ফুটেজ সোনালী ব্যাংক সংরক্ষণ করতে পারেনি।”

এ ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যাংকটিকে অনলাইন নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দেন আসলাম আলম।

অর্থমন্ত্রী নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলতে গিয়ে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুলে ধরেন।

 “ব্যাংকের প্রতি সকলের আস্থা-বিশ্বাস রাখতে হলে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। ২০১২ সালে হল-মার্ক ঘটনার পর ব্যাংকটি যে বিপদে পড়ল, সেই বিপদ কিন্তু এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেই বিপর্যয়ের কারণ ছিল কিন্তু একান্তই অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা।”

শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে প্রসারমান ব্যাংক খাতকে এখন মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন মুহিত।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ এইচ এম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় ব্যাংকের ২০১৩ সালের আর্থিক বিবরণ তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।

তিনি বলেন, গত বছর (২০১৩ সালে) ৫ হাজার ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে সোনালী ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালকে ‘ব্যবসা উন্নয়ন ও খেলাপি ঋণ আদায় বছর’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংককে তার ব্যবসা পদ্ধতি পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বেশি ঋণ দেয়ার পরামর্শ দেন আসলাম আলম।

“কেননা, বড় বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, বরং খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।”

২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা কমে ৩৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

২০১২ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে পরিচালন মুনাফা ৭৭৩ কোটি টাকা কমে ৩৩০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।