থ্রিজি নিলাম: সরকারের আয় ৪০৮১ কোটি টাকা

দেশে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি (থ্রিজি) সেবার প্রথম নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম উঠেছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা থেকে সরকারের মোট আয় হচ্ছে ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2013, 07:45 AM
Updated : 8 Sept 2013, 01:54 PM

ওই দরে ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোন। অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানটি থ্রিজি লাইসেন্স নিচ্ছে ২১ কোটি ডলারে। 

নিলাম চলাকালীন ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী গ্রামীণ ফোনকে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।  

এছাড়া প্রতি মেগাহার্টজ একই দরে পাঁচ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ কিনছে অপর তিন বেসরকারি অপারেটর বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। এ জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে গুণতে হবে প্রায় ৮১৬ কোটি টাকা করে।

থ্রিজি নীতিমালা অনুসারে অপারেটররা ১৫ বছরের জন্য এই লাইসেন্স পাচ্ছে। তবে কেউ আগ্রহী না হওয়ায় বিটিআরসির হাতে থাকা ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অবিক্রিতই থেকে গেছে।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে রোববার রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলায় এই নিলাম হয়।

চার অপারেটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রতিনিধিরা নিলামের ডাকে অংশ নেন।

নিলম শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস সাংবাদিকদের বলেন, এই নিলাম থেকে সরকারের মোট আয় হচ্ছে ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অপারেটর টেলিটক নিলামে ওঠা দর পরিশোধ করে (প্রতি মেগাহার্টজ ২ কোটি ১০ লাখ ডলার) ১০ মেগাহার্টজ থ্রিজি তরঙ্গ ব্যবহার করবে।  

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, অবিক্রিত তিনটি স্লটে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিষয়ে সরকার পরে সিদ্ধান্ত নেবে।

রোববারের নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রথম কিস্তিতে মোট টাকার ৬০ শতাংশ জমা দিতে হবে ৩০ দিনের মধ্যে। বাকি টাকা ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

টাকা জমা দেয়ার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স দেয়া হবে বলে সুনীল কান্তি বোস জানান। 

তবে কোনো অপারেটর নয় মাসের মধ্যে সব বিভাগে সেবা চালু করতে না পারলে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা গুণতে হবে। 

দুই ধাপে প্রথমে ১০ মেগাহার্টজ ও  পরে পাঁচ মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য এই নিলাম পরিচালনা করেন বিটিআরসির থ্রিজি পরামর্শক আবদুল্লাহ ফেরদৌস। নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ২ কোটি ডলার।  

১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য প্রথম বিডে গ্রামীণ ফোন প্রতি মেগাহার্টজের জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের ডাক দেয়। অন্য কোনো অপারেটর এই ডাকে অংশ না নেয়ায় ওই দরেই ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ জিতে নেয় ৪ কোটি ৪৭ লাখ গ্রাহকের এই মোবাইল অপারেটর।  

আবদুল্লাহ ফেরদৌস জানতে চান, ওই দরে আর কেউ ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনতে রাজি আছে কি-না। কিন্তু কেউ তাতে সাড়া না দেয়ায় শুরু হয় নিলামের দ্বিতীয় ধাপ।

এরপর পাঁচ মেগাহার্টজ তরঙ্গের নিলোমে প্রতি মেগাহার্টজের জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ডলার দাম হাঁকেন বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের কর্মকর্তারা। কেউ এর বেশি দর বাড়াতে রাজি না হওয়ায় সেখানেই শেষ হয় দ্বিতীয় ধাপের নিলাম।

এই নিলামের ফলে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে পাঁচ মেগাহার্টজ থ্রিজি তরঙ্গের লাইসেন্স পাবে বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। 

বিটিআরসির হাতে থাকা ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের মধ্যে ১০ মেগাহার্টজ পাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক। থ্রিজি নীতিমালা অনুযায়ী তাদের নিলামে অংশ নিতে না হলেও নিলামে ওঠা দর অর্থাৎ  ২১ কোটি ডলারে ওই তরঙ্গ কিনতে হবে টেলিটককে।    

দুই ধাপে ২৫ মেগাহার্টজের নিলাম হওয়ার পর হাতে থাকা বাকি ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গও নিলামে তোলে বিটিআরসি। কিন্তু অংশগ্রহণকারী চার প্রতিষ্ঠানের কেউ আগ্রহী না হওয়ায় তা অবিক্রিত থেকে যায়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোসসহ কমিশনাররা এই নিলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৯ অগাস্ট নিলামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিড আর্নেস্ট মানি জমা দেয় বেসরকারি এই চার মোবাইল ফোন অপারেটর। নিলামের জন্য যোগ্য বিবেচিত হলেও দেশের প্রথম ও একমাত্র সিডিএমএ অপারেটর সিটিসেল ‘আর্থিক সমস্যার’ কারণে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে নিলাম থেকে ছিটকে পড়ে।