গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব ‘অযৌক্তিক’, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তের আশ্বাস বিইআরসির

বাস্তবতার বাইরে গিয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করলে তা জনমনে ও গ্রাহকের মাঝে অযথা আতঙ্ক তৈরি করে মন্তব্য করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে হবে আরও বাস্তব সম্মত উপায়ে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2019, 08:39 PM
Updated : 14 March 2019, 08:47 PM

আমদানি করা এলএনজির উচ্চ মূল্য সমন্বয়ে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও বাস্তবতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতেই নতুন মূল্য ঠিক করা হবে বলে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

গ্যাসের মূল্য পরিবর্তন নিয়ে চার দিনের শুনানির বৃহস্পতিবার ছিল শেষ দিন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর এদিন সকালের সেশনে এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের প্রস্তাবের ওপর বিকালের সেশনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক কর্মী, ভোক্তা, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা শুনানির বিভিন্ন ধাপে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির মতো কর্ণফুলি ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিও ভারিত গড় মূল্যহার ৭ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ৯১ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ ১০২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তারা।

সমাপনী বক্তব্যে মনোয়ার বলেন, এবারের শুনানিতে ১০২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে শুনানিতে বার বার আলোচনা উঠেছে।

“চাইতে হবে এলএমজির লাইসেন্স, তাইলে একটা পিস্তলের লাইসেন্স পাওয়া যাবে- বাংলাদেশের প্রবণতা এখন এ রকম হয়ে গেছে। এ ধরনের প্রবণতা থেকে কোম্পানি ও সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে হবে।”

করিগরি কমিটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালে প্রস্তাব ছিল ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ, বেড়েছে ১১ শতাংশ। ২০১৫ সালে প্রস্তাব ছিল ৪০ দশমিক ৭৯ শতাংশ, শুনানির পর কমিশন বাড়িয়েছিল ২৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে প্রস্তাব ছিল ৯৫ শতাংশ, বেড়েছে ১১ শতাংশ। ২০১৮ সালে প্রস্তাব ছিল ৭৫ শতাংশ, কিন্তু কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে কোনো দাম বাড়ায়নি।

“এবার প্রস্তাব করা হয়েছে ১০২ শতাংশ। কমিশন নিরপেক্ষভাবে, যৌক্তিকভাবে, আপনাদের শুনানির ওপর ভিত্তি করে যতটুকু প্রয়োজন ততটকু দাম বাড়াবে।”

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “এবার ভোক্তাদের কাছ থেকে একটি পরামর্শ এসেছে দাম বৃদ্ধির ইকনোমিক অ্যানালাইসিস করার জন্য। বিষয়টি নিয়ে কমিশন ভাববে। এ ধরনের কিছু একটা করা যায় কি না তার জন্য সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

নাজমা আক্তার নামের একজন গ্রাহক বলেন, আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ালে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে।

“জ্বালানি খাতে প্রায় চুরিধারীর খবর গণমাধ্যমে শোনা যায়। এসব চুরি বন্ধ করেও অনেক টাকা লোকসান কামনো সম্ভব।”

সকালে কর্ণফূলী গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে শুনানিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের পক্ষ থেকে ফারহান নূর বলেন, “সিএনজি খাতে মাত্র ৫ শতাংশেরও কম গ্যাস ব্যবহার হয়। অথচ এই খাত থেকে রেভিনিউ মোট রেভিনিউর ২২ শতাংশ।

“আগে থেকেই আমরা অনেক বেশি দামে গ্যাস কিনে আসছি।তাই নতুন করে দাম বাড়িয়ে এই খাতকে যেন অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া না হয়।”

কর্ণফুলিসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোরা সিস্টেম লস ও সিস্টেম গেইনের একটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই ভোক্তা।

জ্বলানি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহির রায়হান বলেন, আবেদনকারী পক্ষ নিশ্চয় অনেক পড়াশোনা করেই আবেদন প্রস্তুত করে। আর গ্রাহকদের পক্ষ থেকে যারা আসেন তাদের তো কোনো প্রস্তুতি থাকে না। তবুও কেন আবেদনকারীরা ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খান সেটাই আশ্চর্য্যের ব্যাপার।

“এই থেকে বোঝা যায়, তারা তাদের দায়িত্ব ও কাজ সম্পর্কে সচেতন নন।”