মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চলবে, কূটনৈতিক তৎপরতাও: মন্ত্রী কামরুল

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারকে কূটনৈতিক চাপ দেওয়া হলেও বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2017, 02:08 PM
Updated : 10 Sept 2017, 02:08 PM

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ পানে রোহিঙ্গাদের ঢলের মধ্যে নিজের সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরের পক্ষে রোববার সংসদে এই যুক্তি দেখান তিনি।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কাছে এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে চাল কেনার যৌক্তিকতা জানতে চান প্রশ্ন রেখেছিলেন জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।

জবাবে মন্ত্রী কামরুল বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই মিয়ানমার গিয়েছিলেন। 

“ট্রেডও চলবে আর কূটনৈতিক তৎপরতাও চলবে”, বলেন তিনি।

খাদ্য মজুদ বাড়াতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে ৩ লাখ টন চাল আমদানির তথ্য সংসদে জানান তিনি।

কামরুল বলেন, দ্রুত চাল পাওয়া যাবে এই চিন্তা থেকেই মিয়ানমার থেকে চাল আনতে গিয়েছিলেন তিনি।

“কারণ থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশ থেকে চাল আসতে বেশি সময় লাগে৷ মিয়ানমার থেকে তিন দিনেই চাল আনা যায়। এতে খরচও কম পড়ে।”

মিয়ানমারের সঙ্গে তিন লাখ টন চাল আনার রফা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এখন এক লাখ ২০ হাজার টন পাওয়া যাবে৷ 

সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢলের মধ্যে মিয়ানমারের হেলিকপ্টারের বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘনের মধ্যে প্রতিবেশী দেশটিতে গিয়েছিলেন কামরুল।

গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হয়। তাতে নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য।

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের ভার বহনের সঙ্গে এই দফায় আরও ৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে যোগ হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে সরকারের কোনো কৃপণতা নেই বলে রোববার সংসদে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। 

আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ধরনের কৃপণতা নেই।”

মিয়ানমারের শরণার্থীদের স্থানান্তরের জন্য নোয়াখালীর ঠেঙ্গার চরে ১০ হাজার একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান মায়া। 

“সেখানে রোহিঙ্গাদের আপাতত রাখা হবে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলবে।”

কক্সবাজারে শরণার্থী পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে আসা মায়া বলেন, “অভাবনীয় অবস্থা। রোহিঙ্গারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে এদেশে আসছে। একজন বৃদ্ধকে কাঁধে নিয়ে আরেকজন ৬৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে, সাঁতরে নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।”

মিয়ানমার শরণার্থীদের নিয়ে ‘রাজনীতি’ না করা এবং ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার‘ না করে দুস্থ মানবতার সেবায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোতে সবার প্রতি আহ্বানও জানান এই মন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে বরাবরই অনীহা দেখিয়ে আসছে।

নতুন করে সঙ্কট দেখা দেওয়ায় তা সমাধানে মিয়ানমারকে কূটনৈতিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শরণার্থীদের স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মতো কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে একাধিক নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

বন্যাদুর্গত এলাকায় সহায়তা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মায়া সংসদে জানান, বন্যা কবলিত ৩৫টি জেলায় জিআর চাল ৩৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ১২ কোটি ৫০ লাখ, শুকনো খাবার ৯০ হাজার ৫০০ প্যাকেট, ঢেউটিন ৫ হাজার বান্ডিল ও গৃহনির্মাণে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়া হাওর অঞ্চলের ছয় জেলার ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে ৭১ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল ও ১১৪ কোটি টাকা বিশেষ অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল জানান, দেশে সরকারের আপদকালীন খাদ্য মজুদ কমে যাওয়ায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জি টু জি চুক্তির আওতায় এ পর্যন্ত ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ মেট্রিন টন চাল দেশে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল ও রাশিয়া থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি হচ্ছে।

চার লাখ মেট্রিক টন চাল ও দেড় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই দরপত্রের আওতায় থাইল্যান্ড থেকে ৩২ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন, ভারত থেকে ১৬ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন চাল আসবে।