৫১ দিনেই গত অর্থবছরের তিনগুণ চাল আমদানি

দুই দফা বন্যায় খাদ্য সঙ্কট এড়াতে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2017, 07:10 AM
Updated : 24 August 2017, 07:11 AM

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৫১ দিনে (১ জুলাই থেকে ২১ অগাস্ট) মোট ৩ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস) প্রায় তিন গুণ।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের ৫১ দিনের আমদানির তথ্য হিসাব করে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে।

সরকারি গুদামের মজুদ তলানীতে নেমে আসায় এবং দুই দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল আমদানিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।

আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে সরকার নিজে যেমন চাল আমদানি করছে, তেমনি দুই দফায় শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অবাধ সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পাশের দেশ ভারত থেকে স্থলপথে প্রচুর চাল আসছে।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এপ্রিল-জুনের বন্যায় বোরোর পর চলতি অগাস্টের বন্যায় আউশ ও আমনের উৎপাদন বড় ধাক্কা খেয়েছে। 

“এ পরিস্থিতিতে আমরা আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য মজুদ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে সরকারি পর্যায়ে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দেশে কোনো রকম খাদ্য সঙ্কট নাই। আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে, বাজারেও পর্যান্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে।… আমরা কেবলমাত্র সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য, কোনো রকম সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় সেজন্য বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছি।”

এপ্রিলের শুরুতে হাওরে আগাম বন্যার কারণে এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ লাখ টন কম হওয়ায় এবং বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় গত ২০ জুন আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। সেই সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়।

কিন্তু তাতে মজুদ পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় এবং অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় চালের আমদানি শুল্ক দ্বিতীয় দফায় কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্য মজুদ পরিস্থিতির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১ অগাস্ট পর্যন্ত সরকারের গুদামগুলোতে ৩ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। গত বছরের এই দিনে চালের মজুদ ছিল ৭ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।

গত ২১ অগাস্ট পর্যন্ত যে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৩৯ টন চাল আমদানি হয়েছে, তার মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে এসেছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮১ মেট্রিক টন। আর সরকারি পর্যায়ে ৮৩ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।

আমদানির পর ভর করে সরকারি গুদামের খাদ্য মজুদ জুলাইয়ের ১ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে তিন লাখের উপরে উঠলেও বাজারে চালের দাম কমেনি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বুধবারও ঢাকার বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। আর ভালো মানের চাল চাইলে কেজিতে ৫৮ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকার বেশি বেড়েছে। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮ টাকা। 

অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মনে করছেন, চালের দাম এখনও মানুষের নাগালের মধ্যেই রয়েছে এবং দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনাও তিনি দেখছেন না।

গত ১৮ অগাস্ট তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ট্যাক্স কমানোর ফলে বাজারে চালের দাম অবশ্যই আরও কমবে। বাজারে চালের দাম খুব একটা বেশি নাই, এখন একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। সবার কাছে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে, এখন বাজারে দাম বেশি না।”

তবে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করছেন, সরকার শুল্ক কমানোর উদ্যোগ আরও আগে নিলে বাজারে চালের দাম এতটা বাড়ত না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারের চাল আমদানির শুল্ক অনেক আগেই কমানো  উচিৎ ছিল। তাহলে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বাড়ত। আর সরবরাহ বাড়লে দামও সহনীয় থাকত।”

তিনি বলেন, “এখন যে করেই হোক সরকারি মজুদ বাড়াতে হবে। একবার যে ভুল হয়ে গেছে সেটা যেন আর না হয়। বর্তমানের আড়াই-তিন লাখ টন মজুদ একেবারেই নগন্য। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরীব মানুষকে এই মজুদ থেকেই খাদ্য দিতে হবে।বিবেচনায় রাখতে হবে, একজন মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে মারা না যায়।”