১১ হাজার দুগ্ধ খামারি পাবেন সোনালী ব্যাংকের ঋণ

উন্নতজাতের গাভী পালন ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে প্রাণ ডেইরির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চার জেলার ১১ হাজারের বেশি খামারিকে ঋণ দেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 01:18 PM
Updated : 16 August 2017, 01:42 PM

রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার প্রাণ ডেইরির মূল প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

প্রাণের পক্ষে গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী এবং ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী অনুষ্ঠানে জানান, প্রাণের চুক্তিবদ্ধ খামারিদের গাভী কেনা, শেড স্থাপন, মিল্কিং মেশিন, চপার মেশিন, দুধ বহনের অ্যালুমিনিয়াম ক্যানসহ খামার ব্যবস্থাপনার আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে এ ঋণ দেওয়া হবে।

নাটোরের গুরুদাসপুর, পাবনার চাটমোহর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও বাঘাবাড়ী এবং রংপুরে অবস্থিত প্রাণ এর পাঁচটি ডেইরি ‘হাব’ এর অধীনে ১১ হাজারের বেশি নিবন্ধিত দুগ্ধ খামারি রয়েছে বলে জানান তিনি।

এসব খামারিদের কাছে প্রায় ৫৫ হাজার গবাদি পশু রয়েছে উল্লেখ করে আহসান খান বলেন, “প্রাণ ডেইরি এসব গবাদিপশুর লালন-পালন ব্যবস্থা, টিকা, চিকিৎসা সেবা, খামার স্থাপন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কৃত্রিম প্রজনন প্রভৃতি সেবা দেয়।”

প্রাণের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে উদ্বৃত করে বলা হয়, প্রাণ ডেইরির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী তাদের চুক্তিবদ্ধ খামারিদেরকে এ ঋণ দেওয়া হবে।

খামারিদের জন্যে জামানতবিহীন ঋণসীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা এবং জামানতসহ ঋণসীমা তিন লাখ থেকে দশ লাখ টাকা।

খামারিরা ঋণ পরিশোধের জন্য তিন থেকে পাঁচ বছর সময় পাবেন বলেও জানান তিনি।

বন্যা মোকাবেলায় সক্ষম: মুহিত

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বন্যার ফলে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সরকার তা মোকাবেলায় সক্ষম।

বন্যার ফলে ধান উৎপাদনে বিরূপ প্রভাবের প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, “যে অবস্থা আছে, তাতে সাময়িক বিপত্তি হয়েছে। এটা আমরা অতিক্রম করব। তাতে অতিরিক্ত পয়সা খরচ হতে পারে, সেটা খরচের সামর্থ আমাদের আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে খাদ্যাভাব হবে না।

“এমন অর্থনৈতিক অবস্থা আছে যে, হয়ত যথেষ্ট কষ্ট করতে হবে, কিন্তু বন্যার কারণে যে সংকট এসেছে, সেটা মোকাবেলা করতে আমরা সক্ষম। এই ব্যাপারে আপনাদের কোনো চিন্তা থাকা উচিত নয়।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভাগ্যবান বলতে হবে, বিগত ৮ বছর আমরা একটা ধারাবাহিক অর্থনীতির মধ্যে আছি। প্রত্যেক বছরই আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি আমরা এখন আশা করছি।

“একটা দেশের সুখ হাসিল করতে সবচেয়ে বেশি দরকার ধারাবাহিকভাবে ১০-১২ বছর প্রবৃদ্ধি। এটা থাকলে সেই দেশের জন্য গরীব থাকা অসম্ভব। আমরা ৮ বছর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে আছি। আগামী দুই বছরও থাকবে। সেটা এখনই বলা যায়। হ্যাঁ, দৈব দুর্ঘটনা, এ রকম আকস্মিক বন্যা-এগুলোতে যথেষ্ট অসুবিধা হয়। এরপরও আমি বিশ্বাস করি, ধান উৎপাদনে বিপুল ক্ষতি স্বত্ত্বেও আমাদের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হারে অব্যাহত থাকবে।”

সোনালী ব্যাংক প্রাণের প্রকল্পে এগিয়ে এসে ভালো কাজ করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক কান কথা আছে। আপনারা অনেক অপ্রিয় কিছু বলেন। আমরা বলি, আমরা এগুলোকে রাখি, পুষি, তারা আমাদেরও কষ্ট দেয়, তবুও পুষি। কারণ এই রকম উদ্ভাবনী কিছু যদি হয়, ওই প্রাইভেট ব্যাংকে পাবেন না।

“এখানে ঝুঁকি আছে, সরকারি ব্যাংক তা নেয়। আমরা সেটাতে সমর্থন করি। ঋণ খেলাপিসহ অন্য যে ব্যাপারগুলো আছে, সেটা ভাল না। তাদের অস্তিত্বটাই হল এই সব উদ্যোগকে সাহায্য করতে। তারা সেটা করেছে।”

কৃষিভিত্তিক শিল্পে প্রাণের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ চৌধুরীর অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “তিনি যা করে গেছেন, সেটা আমাদের দেশের জন্য দিক-নির্দেশনামূলক।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।