এমপি হারুনের ‘১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের’ নথি দিতে দুদকের তাগাদা

আওয়ামী লীগে সাংসদ ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক বজলুল হক হারুনের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে তৃতীয়বারের মতো ব্যাংকটিকে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 08:12 PM
Updated : 13 August 2017, 08:14 PM

আগামী ১৭ অগাস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য চেয়ে গত বুধবার এ নোটিশ পাঠানো হয় বলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. শামছুল আলম জানিয়েছেন।

ব্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো নোটিশে বংশাল শাখার গ্রাহক রুমী এন্টারপ্রাইজের এসটিডি হিসাবের ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি, হিসাব নম্বর থেকে লেনদেনের রেকর্ড ও বিবরণীর সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়।

এছাড়া রুমী এন্টারপ্রাইজের ওই হিসাব থেকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৮৫টি চেকের মাধ্যমে ২০৭ কোটি টাকা উত্তোলন সংক্রান্ত চেকের মূল কপি এবং এর সত্যায়িত কপি, হিসাবের বিপরীতে চেকবই ইস্যুসহ সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার এবং চেকবই গ্রহণকারীর স্বাক্ষরযুক্ত প্রমাণপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া চেক ইস্যুকরণ, ক্লিয়ারিং ও টাকা উত্তোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের নাম, পদবি ও বর্তমান ঠিকানা, রুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. খলিলুর রহমানের কেওয়াইসি ছাড়াও নমুনা স্বাক্ষর কার্ড, ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয় নোটিশে।

অনুসন্ধান দলের প্রধান শামসুল আলম রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে দুই দফায় নথিপত্র চেয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা ওই সময় কোনো নথিপত্র দেয়নি। এবার নোটিশ দেওয়ার পর কিছু নথিপত্র তারা পাঠিয়েছে, তবে অন্যান্য যেসব নথি বাকি রয়েছে সেগুলো আগামী ১৭ অগাস্টের মধ্যে তাদেরকে পাঠাতে বলা হয়েছে।”

অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র না পাওয়া গেলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ (৩) ধারায় ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।

গত বছর বিএইচ হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান।

দুদকে লিখিত অভিযোগে খলিলুর বলেন, তার ব্যাংক হিসাব থেকে ব্যাংকটির পরিচালক এমপি হারুন অন্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ওই অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন।

“এসব অর্থ দিয়ে সাংসদ হারুন ব্যাংকের দেনা, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়, বনানী ও বারিধারায় বহুতল ভবন নির্মাণ, তার বড় ছেলেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক করা, দুটি জাহাজ ক্রয়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট ক্রয় ও চারটি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়সহ নানা খাতে ব্যয় করেছেন।”

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের জুলাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শামসুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দলের অপর সদস‌্য হলে দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আলাদাভাবে একই অভিযোগ করেন খলিলুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়, সৌদি সরকারের সাহায্যে ২০০৮ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ১৫ হাজার ঘর নির্মাণে ২০৪ কোটি টাকার কাজ পান তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ছিল প্রিমিয়ার ব্যাংকের বংশাল শাখায়। সিডর এলাকায় কাজ চলাকালে ব্যাংকে জমা হওয়া ২০৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৯৭টি চেকের মাধ্যমে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করেন তিনি।

কাজ শেষে বাকি ১৩৪ কোটি টাকা তোলার জন্য বংশাল শাখায় গেলে তৎকালীন শাখা ম্যানেজার সামসুদ্দিন চৌধুরী তাকে জানান, তিনি (গ্রাহক খলিলুর রহমান) সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন এবং হিসাবও বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর তিনি দুদক ও বাংলাদেশ ব‌্যাংকে অভিযোগ করেন।

অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সময় বিএইচ হারুন প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত বনানীর হোটেল রেইন ট্রির মালিক বিএইচ হারুনের ছেলে মাহির হারুন।