ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারে পিছু হটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

সুদের হার যতটুকু কমিয়ে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কার্যকরের আগেই তাতে পরিবর্তন এল।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2017, 05:19 PM
Updated : 14 Nov 2021, 12:57 PM

দৃশ্যত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাপেই ক্রেডিট কার্ড নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে এই নীতিমালা কার্যকর করাও আগামী বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে সরকার।

সুদের হার নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে গত ১১ মে প্রথম বারের মতো ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

তাতে সুদের হার বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছিল, ভোক্তা ঋণের সুদের হারের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি সুদ ক্রেডিট কার্ডে নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

নীতিমালাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু ভোক্তা ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে এ সেবার সুদহার নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারি সিটি, ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং বিদেশি স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডে বিনা জামানতে ঋণের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন তারা।

ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে একটি সেবা, যার মাধ্যমে গ্রাহক স্বল্প মেয়াদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। ব্যাংক ঋণের চেয়ে অনেক অল্প সময়ে একটি ক্রেডিট কার্ড নেওয়া যায় বলে এই সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

এখন অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ৩০ শতাংশের বেশিও সুদ নিচ্ছে; যা নিয়ে গ্রাহকদের রয়েছে অসন্তোষ।

সেই কারণে সুদের হার ভোক্তাঋণের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেটি সংশোধন করে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের অন্য যে কোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে ৫ শতাংশ সুদ ক্রেডিট কার্ডে নিতে পারবে।

ক্রেডিট আছে এমন ব্যাংকগুলোতে ভোক্তা ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। সেই হিসাবে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদহার হত ১৭ থেকে ২০ শতাংশ।

কিন্তু এসএমইসহ কিছু ঋণে ২০ শতাংশ পর্যন্তও সুদ নেয় ব্যাংকগুলো; সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার তার সঙ্গে ৫ যোগ হয়ে ২৫ শতাংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হল।

নীতিমালা জারির পর তা অবিলম্বে কার্যকরের কথা বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখন বলা হয়েছে, এটি ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১১ মে জারি করা নীতিমালা বাস্তবায়নকালে ব্যাংকগুলো কিছু কিছু প্রায়োগিক ও কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

‘সার্বিক বিষয়াবলি পর্যালোচনা করে ব্যাংকগুলোর পরিপালনের সুবিধার্থে’ নীতিমালার কিছু ধারা সংশোধন করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে।

সংশোধিত নীতিমালায় বৈদেশিক মুদ্রা বা দ্বৈত মুদ্রায় সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে; আগে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

এছাড়া পরিবর্তিত নীতিমালায় কার্ডের বিল কালেকশনের সময়সীমা বন্ধের দিনে (সাপ্তাহিক ছুটি অথবা অন্য যে কোনো সরকারি ছুটি) শেষ হলে তা তার গ্রেস পিরিয়ড পরবর্তী কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানোর সুবিধা রাখার বিধান করা হয়েছে।

কার্ডের অর্থ আদায়ে গ্রাহককে যখন-তখন টেলিফোনে অথবা অসময়ে বিরক্ত না করে উপযুক্ত সময়ে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।

সংশোধিত নীতিমালায় ক্রেডিট কার্ড সেবার প্রতারণা রোধে গ্রাহক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম-আচার মানার কথাও বলা হয়েছে।

কার্ডের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিটি আউটলেটে পিন কোড অথবা বায়োমেট্টিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।