চালের দাম বাড়ার আভাস ব্যবসায়ীদের

আমদানির তোড়জোরে চালের দাম কিছুটা কমলেও সহনীয় পর্যায়ে নামেনি; বরং গত একমাসে সামান্য বেড়েছে বাঙালির প্রধান এই খাদ্যশস্যের দাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2017, 12:43 PM
Updated : 28 July 2017, 02:33 PM

আমদানি করা চালের উচ্চমূল্যের প্রভাবে দেশি চালের দাম কমছে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। উপরন্তু ধানের দাম কিছুটা বাড়ায় চালের দাম ফের বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তারা।

উত্তর বাড্ডার সাতারকুল রাইস এজেন্সির ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধানের দাম কিছুটা বাড়তি থাকায় গত ১৫ দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০ টাকা বেড়েছে।

“এখন বেশিরভাগ চাল অটো মিলে প্রসেস হওয়ায় বৃষ্টিতে সমস্যা হয় না। আগে এই সমস্যা ছিল, তখন টানা বৃষ্টি হলে চালের দামও বাড়ত।”

৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চাল ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৫০০ থেকে ২৭৫০ টাকা এবং আটাশ চালের বস্তা (লোকাল) ২১৮০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান আবু বকর।

এছাড়া মোটা চাল ১৯৫০ থেকে ২০০০ টাকা এবং অটোমিলে প্রক্রিয়াজাত হওয়া বিআর আটাশ চালের বস্তা ২৩০০ টাকা থেকে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কারওয়ান বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির রাসেল জানান, ৫০ কেজি মিনিকেট ২৫০০ থেকে ২৬৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকা, অটোমিলে প্রক্রিয়াজাত আটাশ ২৩০০ থেকে ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা দেশি মোটা চাল সর্বনিম্ন ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১২৫ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা।

ধানের দাম কিছুটা বাড়ায় গত ১৫-২০ দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বেড়েছে জানিয়ে রাসেল বলেন, “মিলাররা বলেছেন, চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাকি তারা চালের দাম কিছুট বাড়াবেন।”

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমদানির চাল বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় দেশি চালের দামও কমছে না।

“সরকার যাদের চাল আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে। বাজারে ওই চাল কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। আমাদানির চাল বিক্রিও সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।”

চালের বাজার সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকারকে ‘অপারেশন’ চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত সরকারি গুদামে ৩ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এরমধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৬১ হাজার টন গম। এছাড়া খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে আছে ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১ থেকে ২৫ জুলাই বেসরকারিভাবে ১ লাখ ১৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও ভারত চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ওই দেশ থেকে আসা সিদ্ধ চাল বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমদানি করা চালের দামই তো বাজারে বেশি। দেশি চালের দাম কমবে কীভাবে?”

“সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক কমালেও ভারত চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ভারত থেকে বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে। ভারত থেকে আসা চালের দামও বাজারে বেশি। সিদ্ধ চাল ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে পাওয়াও যায় না।”

মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় ধানের দাম বাড়ছে জানিয়ে লায়েক আলী বলেন, “আগামী এক-দেড় মাস পর চালের দাম বাড়বে। মার্কেট অপারেশন না করলে চালের দাম কিছুতেই কমবে না।

“সরকারের নির্দেশনা মেনে যারা ধান মজুদ করেছিল এখন তারাই মিল চালাতে পারছে। বাজার থেকে এখন নতুন করে ধান কিনে মিল চালানো সম্ভব না।”

চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারকে অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন’ চালানোর আহ্বান জানান জয়পুরহাটের এই চাল ব্যবসায়ী।