‘প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একটি হ্যাকিং’

বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে হ্যাকারদের একটি আক্রমণ ঘটার তথ্য জানিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় সাইবার নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিতে একটি কর্মশালায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2017, 12:53 PM
Updated : 23 July 2017, 01:34 PM

রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এবং ট্রান্স আইটি সলিউশনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত আকবর বলেন, “হ্যাকাররা প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও আক্রমণ করে যাচ্ছে।

“এক হিসেবে শুধু র‌্যানসমওয়্যারের কারণেই ২০১৬ সালে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ সাইবার অপরাধজনিত ক্ষতির মাত্রা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।”

তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে হ্যাকাররা প্রথমেই লক্ষ্যবস্তু করে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের। তাদের ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে ঢোকার চেষ্টা চালায়।

গত এক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের পাশাপাশি বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও হ্যাকারদের কবলে পড়েছিল।  

রুবাইয়াত আকবর বলেন, হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত। তাই ব্যাংকগুলোতে কর্মরত সবার সাইবার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ধারণা এবং তা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

ছবি- রয়টার্স

অনুষ্ঠানে ট্রান্স আইটির পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর কয়েকটি সাইবার আক্রমণের কীভাবে হয়েছিল, তা দেখানো হয়। অনিরাপদ ওয়াইফাই ব্যবহার করে ল্যাপটপ হ্যাক করার মাধ্যমে হ্যাকাররা কীভাবে দুর্বলতার সুযোগ নেয়, তাও দেখানো হয়।

বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রস্তুতি’ শীর্ষক এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর ফজলে কবির। বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এবিবি চেয়ারম্যান আনিস এ খান, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন এবং ট্রান্স আইটি সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম চৌধুরী মিজান।

সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের ব্যাংকের কর্মীদের সচেতনতার গুরুত্ব স্বীকার করে গভর্নর বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে একটি গাইড লাইনও প্রস্তুত করেছে।”

স্থানীয় ব্যাংকগুলোকেও এবিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এবিবি চেয়ারম্যান আনিস খান বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকারদের সচেতনতা বাড়ানো ও প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে হবে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, মাঝারি মাপের বিপর্ষয় হলে অনেক ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বড় ধরনের বিপর্যয় হলে কোনো ব্যাংকেরই সেবা দেওয়া সম্ভবপর হবে না। কারণ ডাটা সেন্টারের যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার, তা ব্যাংকগুলোর নেই।

ট্রান্স আইটি সলিউশনের সিইও আমিরুল ইসলাম বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে তথ্য নিরাপত্তা সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুধু ঢাকা বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।