তবু ৪২ টাকার কমে চাল নেই

সরকারের উদ্যোগের মধ্যে পাইকারিতে চালের দর কমার প্রভাবে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো কেজিতে ৪০ টাকার উপরে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2017, 12:30 PM
Updated : 14 July 2017, 12:39 PM

বাড়তে থাকা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির ঘোষণার মধ্যে ঈদের পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে; ২০ টন চালের প্রথম চালান বন্দরেও ভিড়েছে।

তবু এর মধ্যে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকা কমে ৪২ টাকায় নেমেছে, ঢাকায় যেই চালের দাম এক বছর আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে কোথাও ৪২ টাকার কমে কোনো চাল বিক্রি করতে দেখা যায়নি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার পাইকারিতে মোটা চাল ৪০ থেকে সাড়ে ৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে গুটি চাল ৪২ টাকা ও স্বর্ণা ৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

আর রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়।

বাবুবাজারের পাইকার বসুন্ধরা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা সালাউদ্দিন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশ থেকে চাল আসার পর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে গেছে, মিলাররা চালের দাম কমাতে শুরু করেছেন।”

তিনি জানান, শুক্রবার বাবুবাজারের মিনিকেট ৫১ থেকে ৫২ টাকা, বিআর আটাশ ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বিআর ঊনত্রিশ ৪৫ টাকা এবং মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৯ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করায় বাজারে চালের দাম বেড়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও দাবি করেছেন। এজন্য ১৬ হাজার মিল মালিককে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বাবুবাজারের বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, “চালের দাম ধীরে ধীরে কমছে। খুচরা বিক্রেতারাও দাম কমাতে বাধ্য হবেন। কারণ বাজার তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। সিন্ডিকেট ছাড়া কেউ চাইলেও বেশি দামে বিক্রি করে টিকে থাকতে পারবে না।”

উত্তর বাড্ডার শিকদার রাইস এজেন্সির শেখ হেলাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তা ২৬০০ থেকে ২৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নাজিরশাইলের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৪৪০ থেকে ২৪৫০ টাকায়।

“এছাড়া ভারত থেকে আসা মোটা চালের বস্তা (৫০ কেজি) ২১৬০ থেকে ২১৮০ টাকা এবং আটাশ চালের বস্তা ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

হেলাল জানান, গত রোজার ঈদের আগে মিনিকেটের বস্তা ২৬৭০ থেকে ২৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওই সময় অন্য চালের দামও বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে বেশি ছিল।

“পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার বেশি প্রভাব পড়েনি। কারণ দাম যতটুকু কমেছে খুচরা বিক্রেতারা তা গোনার মধ্যেই আনছেন না।”

মহাখালী কাঁচা বাজারের সেলিম রাইস ভাণ্ডারের মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, এই বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫২ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল (ভারতের স্বর্ণা) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফরহাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০ দিন আগেও এই বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম একই থাকলেও মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা করে। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কমেছে ৫ থেকে ৬ টাকা।

মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের হারুন রাইস এজেন্সির বিক্রয়কর্মী মিজানুর রহমান জানান, মিনিকেট ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬২ থেকে, আটাশ ৪৯ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক মাস আগেও মোটা গুটি চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি করে বিক্রি হলেও শুক্রবার এই চাল ৪২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“৪২ টাকার নিচে বাজারে কোনো চাল নেই।”

কারওয়ান বাজারে খুচরা চালের দোকানি বেলাল হোসেন বলেন, “পাইকারি বাজারে চিকন চালের দাম খুব বেশি না কমায় খুচরাও দাম কমেনি।”

পাইকারিতে মোটা চালের দাম কমায় খুচরা বাজারেও এই চালের দাম কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে আরও চাল এলে সব ধরণের চালের দাম কমবে বলে আমরা ধারণা করছি।”

মজুদ তলানীতে নেমে যাওয়ায় সরকারিভাবে চাল আমদানি করে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সরকারি মজুদ ১২ লাখ মেট্রিক টন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। শুল্ক কমানোয় বিদেশ থেকে চাল আমদানিও হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, ১২ জুলাই সরকারি গুদামে ৩ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। এরমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৬৭ হাজার টন গম।