প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় বুধবার তিনি বলেছেন, এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ থাকায় খাদ্যের অভাব দেখা দেওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি।
“তবে হ্যাঁ, এই মূল্য বৃদ্ধিটা বৃষ্টির কারণে। যেহেতু হাওড়ে ফসল নষ্ট হয়েছে; তার কারণে কিছু মুল্য বৃদ্ধি। আর এখানে হয়তো কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিও থাকতে পারে।”
চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সমালোচনা চলছে কয়েক মাস ধরে। সরকারি হিসাবে গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি; আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খাদ্যে অভাব কিন্তু আমাদের নেই। তবে কিছুদিন চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের মজুদ যে কম আছে সেটা কিন্তু নয়।”
দেশের সব চাল গুদামের মজুদ পরিস্থিতির তথ্যও এ সময় তিনি সংসদে তুলে ধরেন।
>> সরকারি গুদামে মজুদ এক লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।
>> অনুমোদিত মিলগুলোর মজুদ ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৫ লাখ মেট্রিক টন।
>> অননুমোদিত মিল, কৃষক পর্যায়, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে মজুদ ৫০ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৬ মেট্রিক টন।
>> সব মিলিয়ে মোট এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে।
টানা কয়েক বছর বাম্পার ফলনের কারণে টানা কয়েক বছর চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয় হাওরে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুদ অনেক কমে আসে।
এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার উগ্যোগী হয়। সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য দরপত্র দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
‘এটাই হলো গণতন্ত্র’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার এবারের চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটকে তার দেওয়া ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট’ বললেও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট নিয়ে সংসদে ঘরে বাইরে দুই পক্ষেরই সমালোচনা সইতে হয়েছে তাকে।
সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুহিতের ১১টি বাজেট পেশকে ‘ইতিহাস’ হিসাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “বাজেট আলোচনায় সরকার দলীয় সদস্যরা আলোচনা করেছেন। সরকার না বিরোধীদল বুঝতে দেয়নি.. এতোটুকু খুত হলে ছাড়েনি। এটাই হলো গণতন্ত্র। জনগণের কাছে আমাদের ওয়াদার প্রতিফলন ঘটে বাজেটের মধ্য দিয়ে।”
চার লাখ কোটির বেশি টাকার বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বাজেট হত বিদেশি অনুদান ও অর্থের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশ এখন সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।
“লাখো শহীদের রক্তে আমরা আজ স্বাধীন। আমরা কারও কাছে ভিক্ষা বা অনুদান নিয়ে চলতে চাই না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।”
নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি অনুদানের পরিমাণ এক দশমিক চার শতাংশ ধরার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেটের ৯০ শতাংশ নিজেস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে।
“২০৪১ সালের মধ্যে আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পারব।”
সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বেকারত্বের হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করেছি।”
সামাজিক নিরাপত্তার ওপরও বিশেষভাবে নজর দেওয়ার কথা বলেন সরকারপ্রধান।
‘গরু ছাগল বলবেন না’
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি স্কুল কলেজের পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ পদ্ধতি বদলে আগের মত ডিভিশন পদ্ধতি চালু করার কথা বলেন।
তার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড ডিভিশন থাকলে ভালো করবে, এটা না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা মানসিক শক্তি হারিয়ে যাবে। পৃথিবীর কোথাও ওই পদ্ধতি নাই।
“ডিভিশন নিয়ে বিদেশে গেলে তাদের নেবে না। সেজন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা পেছনে যেতে চাই না”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসএসসি-এইচএসসির পাসের হার প্রসঙ্গে এরশাদ তার বক্তব্যে বলেন, “গরু হোক,গাধা হোক; শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ আছে, পাস করিয়ে দিতে হবে।”
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাস করলেই গরু-ছাগল হয়ে যায় না। দয়া করে গরু ছাগল বলবেন না।”