রাজধানীতে ‘সিএনজি দুর্ভোগ’

গাড়িতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় নেমে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে।

তাবারুল হকও রিফাত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2017, 09:20 AM
Updated : 28 June 2017, 12:54 PM

ছুটির পর এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা এমনিতেই কম থাকে। তার মধ্যে গ্যাসের অভাবে বুধবার সকাল থেকে অটোরিকশার সংখ্যাও কম দেখা গেছে।

আগের রাতে গ্যাস নিতে পারায় সকালে যারা অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন, তারাও বেশি ভাড়া হাঁকছেন। ফলে লম্বা দূরত্বের যাত্রীদের পকেট থেকে বেশি টাকা যাচ্ছে।  

ঈদের ছুটি কাটিয়ে বুধবার সকালে টঙ্গী থেকে কচুক্ষেতে এসেছেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) চাকুরে সাঈফুল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, সাধারণ সময়ে ওই দূরত্বে তার আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা ভাড়া লাগলেও বুধবার দিতে হয়েছে সাড়ে ৫০০ টাকা।

“ড্রাইভাররা বলতেছে গ্যাস নাই, ভাড়া বেশি দিতে হবে। চাপের মুখেই বাড়তি টাকা দিতে হল।”

রেহানা বেগম নামের এক নারী নীলক্ষেতে যাওয়ার জন্য মিরপুর ১৪ থেকে অটোরিকশা খুঁজছিলেন।

এমনিতে ওই পথে ২০০ টাকা ভাড়া উঠলেও ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকার কারণ দেখিয়ে চালকরা সাড়ে ৩০০ টাকা  হাঁকছেন বলে জানালেন তিনি।    

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান জানালেন, উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকা থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার জন্য তাকে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে।

বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর এলাকার অটোরিকশা চালক রমজান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দিনে ‍দুই থেকে তিনবার গ্যাস নেওয়া লাগে। কাইল থেইকা গ্যাস বন্ধ। রাত্রে যারা গ্যাস ভরতে পারছে, তারাই আজকে রাস্তায় বাইর হইছে। গাড়ি কম, তাই ভাড়াও বেশি।”

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় বুধবার প্রথম প্রহর থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওই ঘোষণা আসার পর গ্যাসের জন্য ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভিড় লেগে যায়। কিন্তু রাত ১২টায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ায় গ্যাস না পেয়েই অনেককে ফিরতে হয়।

সেকান্দার মিয়া নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, “বিপদে তো আমরাও পড়ছি। সিএনজি চালাইতে পারতেসি না। সকালে বাইর হইছিলাম, দুই ট্রিপ মাইরাই গ্যাস ফুরায়ে গ্যাছে। আমাগোরও তো বউ বাচ্চা আছে।”

টঙ্গী-যাত্রাবাড়ী রুটের তুরাগ পরিবহনের বাস চালক শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে কোনো গ্যাস নিতে পারি নাই। সকাল থেকে দুই ট্রিপ দিছি। আর বোধ হয় এক ট্রিপ দেওয়া যাবে। এরপর থেকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।”

বলাকা পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার মো. ফরহাদ জানান, রাতে খবর পাওয়ার পর গ্যাস নিতে ফিলিং স্টেশনে গেলেও লম্বা লাইনের কারণে নিতে পারেননি। আগের দিনের যেটুকু গ্যাস গাড়িতে আছে, তা দিয়ে বুধবার সারাদিন চালানো যাবে না।

চালকদের অধিকাংশই বলেছেন, একদিন যে গ্যাস পাওয়া যাবে না, তা আগে থেকে না জানানোর কারণে তাদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অনেকেই সকালে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করার সময় গ্যাস বিক্রি বন্ধ থাকার বিষয়টি জেনেছেন।

দেলোয়ার হোসেন নামের এক অটোরিকশা চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাস দেওয়া যে বন্ধ সেইটা শুনছি সকালে। কিছু তো করার নাই। গতকালের গ্যাস দিয়া তিনটা ট্রিপ দিছি। এই টাকায় মালিকের জমাও হবে না।”

দুপুরে রাজধানীর গোপীবাগ থেকে ৫০০ টাকার চুক্তিতে যাত্রী নিয়ে উত্তরার পথে রওনা হন অটোরিকশা চালক আবদুল বারেক।

তিনি বলেন, “আমার গাড়িতে গ্যাস একেবারেই অল্প। সাহস করে ট্রিপ নিলাম। পৌঁছাইতে পারব কিনা জানি না। রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে আবার ফিলিং স্টেশন না খোলা পর্যন্ত বসেই থাকতে হবে।”

আজাদ মুন্সী নামে আরেক অটোরিকশা চালক বলেন, তার গাড়ির সিলিন্ডার ছোট হওয়ায় পুরো এক দিনের মত গ্যাস জমা রাখা যায় না। ফলে আগের দিন গ্যাস নিলেও দুপুরের পর আর তার গাড়ি চলবে না।

“তারপরও মালিকের জমা ৯০০ টাকা ঠিকই দিতেই হবে। তাতে আমার পকেটে এক পয়সাও থাকবে না।”

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ফেরার সুবিধার জন্য সরকার ২৪ ঘণ্টা পাম্প খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ঈদের একদিন পরেই ২৪ ঘণ্টা ফিলিং স্টেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিল। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংঘর্ষিক। 

অবশ্য জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলছেন, যেসব গাড়ি সিএনজিতে চলে, সেগুলো তেলেও চালানো যায়। ফলে বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

অটোরিকশা চালক ও যাত্রীদের সমস্যা হলেও সঙ্কট ততোটা মারাত্মক হয়ে ওঠেনি ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে ঢাকার রাস্তায় লোক চলাচল কম হওয়ার কারণে। 

সকাল থেকে পাবলিক বাসে যাত্রী ছিল কম। বিভিন্ন এলাকায় বাস থামিয়ে যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করতেও দেখা যায় হেলপারদের।

বিমান বন্দর রুটের রাইদা পরিবহনের যাত্রী ইব্রাহিম শেখ বলেন, “বাসের ভাড়া আগের মতই নেওয়া হচ্ছে। গ্যাসের জন্য বাসে বাড়তি ভাড়া চায়নি।”