হঠাৎ গাড়িতে গ্যাস বন্ধে বিপত্তি

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় বুধবার প্রথম প্রহর থেকে রাজধানীতে ফিলিং স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সমস্যায় পড়েছেন অনেকে।

আব্দুল মান্নানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 09:18 PM
Updated : 28 June 2017, 06:04 AM

মঙ্গলবার রাত ১২ থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বিবিয়ানায় গ্যাস উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান।

তিনি রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিবিয়ানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় তারা যেসব সিএনজি ফিলিং স্টেশনে (সারা দেশের মোট স্টেশনের ৬০ শতাংশ) গ্যাস সরবরাহ করে, সেগুলোতে গ্যাস দেওয়া বন্ধ থাকবে।

বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়, তাতে সারা দেশের ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।

মঙ্গলবার রাতে এই ঘোষণা আসার পর গ্যাসের জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ভিড় লেগে যায়। কিন্তু রাত ১২টায় স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় গ্যাস না পেয়েই অনেককে ফিরতে হয়।

মগবাজারের আনুদীপ সিএনজি কনভার্সন ও সার্ভিসিং সেন্টারে ঠিক রাত ১২টায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেখানকার কর্মী মো. হাসানুল ইসলাম জানান, মালিকপক্ষের নির্দেশে তারা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছেন। বুধবার ১২টা পর্যন্ত তাদের পাম্প বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

সেখানে দেড়া ঘণ্টা সিরিয়ালে থেকে গ্যাস না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে রাত ১১টার সময় জানতে পেরে তিনি এখানে ছুটে আসেন। সাড়ে ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও গ্যাস নিতে পারেননি।

“আগে কিছু না জানিয়ে হুটহাট এভাবে গ্যাস বন্ধ করে দিছে। এখন আমরা কী করব?”

সেখানে গ্যাস না পেয়ে ফিরে গেছেন গাড়িচালক লাভলু মিয়া।

তিনি বলেন, “সাহেব ফোন করে বললে কাটাবনের বাসা থেকে দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসি। কিন্তু কাজ হলো না।”

রাত ১১টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাসের জন্য গাড়ির দীর্ঘ লাইন।

ওই স্টেশনের ক্যাশিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মালিক রাত ১০টার দিকে ফোন করে ১২টায় গ্যাস দেওয়া বন্ধ করে দিতে বলেছেন।

সেখানে গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি অটোরিকশা চালক তাজউদ্দিন বলেন, “মালিক ফোন করে জানালে সরাসরি এখানে চলে এসেছি।”

মো. আলী আশরাফ নামে আরেক অটোরিকশা বলেন, বাড্ডার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি।

“মালিক ফোন করলে তাড়াতাড়ি উঠে গ্যাসের জন্য চলে এসেছি।”

তিতাসের কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই ২৪ ঘণ্টা বাসা-বাড়িতে সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

ঈদের ছুটির সময় কল-কারখানায় গ্যাসের ব্যবহার কম থাকায় গ্যাসক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ সময়কে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে মঙ্গলবার ছিল ঈদের ছুটির শেষ দিন। ফলে বুধবার সারাদিন ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাস বন্ধ থাকলে ঈদ করে ঢাকায় ফেরা মানুষ সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০১৫ সালে একই কারণে ঈদের দিন রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা ফিলিং স্টেশনগুলো গ্যাস পায়নি।

এর ফলে ওই রাতেই ফিলিং স্টেশনগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা দেয়। পরদিনও বাইরে বেরিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে।  

এবারও একই আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর। 

এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের আগে পরে ১০ দিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক।

“ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ফেরার সুবিধার জন্য সরকার ২৪ ঘণ্টা পাম্প খোলা রাখার অনুমতি দিল। আবার এই সময়ের মধ্যেই সারাদেশে পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। এ কারণে মানুষের অনেক দুর্ভোগ হবে।”