রসে ভরা টাটকা ফলের সমাহার

মধু মাস জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে আষাঢ়ে মেঘ আকাশ ঢাকলেও আম, জাম, কাঠালে এখনও ভরে আছে ফলের বাজার, ঢাকার অলি-গলির দোকানেও মিলছে এসব দেশি ফল।

রিফাত রহমানও সাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2017, 04:37 PM
Updated : 21 June 2017, 04:44 PM

রসে ভরা টাটকা এসব ফলের সঙ্গে বিদেশি সুস্বাদু ফলের সমাহার বসেছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের ফলের বাজারে। রোজায় টাটকা দেশি-বিদেশি ফলের স্বাদ পেতে এখানে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, তরমুজ, গাব, আনারস, বাঙ্গি, লটকনের মতো দেশি ফলের পাশাপাশি এখানে পাল্লা দিয়ে বিকিকিনি চলছে চেরি, পিয়ার, কিউই, আপেল, মাল্টা, রামবুটানের মতো বিদেশি ফল, আর ইফতারের জনপ্রিয় অনুসঙ্গ ‘খেজুর’ তো আছে।

বছরের এই সময়ে ফলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি হয় জানিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ যতই এগিয়ে আসছে তাদের বিক্রিও তত বাড়ছে।

ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ আল-আমিন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা আম, আপেল, আঙুর ও মাল্টার।

দেশি-বিদেশি সব ফলেরই আলাদা ‘কাস্টমার’ থাকার কথা জানান আরেক ফল বিক্রেতা আল ইসলাম।

এদিন ওই বাজারে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে ‘আমরুপালি’, ‘ল্যাংড়া’ ও ‘হিমসাগর’ আমের। কেজি প্রতি একশ টাকায় মিলছে এসব আম।

প্রায় ৫০ বছর ধরে পল্টনে ফল বিক্রি করে আসা আল-ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের এখানে অস্ট্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চেরি আসে। কেজি প্রতি এক হাজার থেকে দুই হাজারে মিলবে এসব চেরি। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ‘পিয়ার’ (২৫০ টাকা কেজি), নিউ জিল্যান্ডের ‘কিউই’ (৬৫০ টাকা কেজি) ও থাইল্যান্ডের ‘রামবুটান’ (৫৫০ টাকা কেজি), কোরিয়ান ‘বাবরি’ (৫০০ টাকা কেজি) এখানে পাওয়া যায়।

এখানে ফলের দাম কিছুটা বেশি বলে ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়ে ফল বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, “এখানে ফ্রেশ বিদেশি ফল পাইবেন, যা ঢাকায় কোথাও নাই। আর ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়।”

পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের পাশের গলিতে এই ফলের বাজারে চার যুগ ধরে ফল বিক্রি করছেন বাবুল আক্তার। গত কয়েক বছর ধরে তিউনিশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা খেজুর বিক্রি করছেন তিনি।

বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে প্লেনে করে এসব খেজুর আনা হয়।

তার দোকানে হরেক রকম বিদেশি খেজুরের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের ‘আম্বার’, ইরানের ‘মরিয়ম’, তিউনিশিয়ার ‘দাপাস’ ও পাকিস্তানের ‘খুরমা’। প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব খেজুর।

বাংলাদেশে অনেকের কাছে অপরিচিত ‘ড্রাগন’ নামের একটি ফলের বেশ চাহিদা দেখা যায় এই বাজারে।

বিজয়নগরের একটি রেস্তোরাঁর কর্মী জাকির হোসেন মিল্টন কিনছিলেন এই ড্রাগন ফল।

“রেস্টুরেন্টের কিছু খাবারে আমরা বিদেশি ফল ব্যবহার করি। সেগুলো এখান থেকেই নেই,” বলেন তিনি।

বিক্রেতারা জানান, নাটোরের চাষী কামরুজ্জামান এই ফলের প্রধান যোগানদাতা। এক কেজি ড্রাগন ফল মিলবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।

এছাড়াও প্রতি কেজি বেদানা ৩০০ টাকা, পিয়ার ২৫০ টাকা, মাল্টা ১৪০ টাকা, আপেল ১৮০ টাকা, নাশপাতি ২০০ টাকা, পেয়ারা ১০০ টাকা ও জাম ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি কেজি তরমুজ, বাঙ্গি ও আনারসে গুণতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা।

এখানে দাম একটু বেশি নিলেও সতেজ ও সুস্বাদু রসালো ফল মেলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।

হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে কর্মরত শাহিনা আক্তার ‍বিকালে এখানে আসেন ইফতারের জন্য ফল কিনতে। নাশপাতি আর আপেলের সঙ্গে আধা কেজি রামবুটান কেনেন তিনি।

অন্যান্য বাজার থেকে দাম তুলনামূলক বেশি জানিয়ে শাহিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফলের মান খুব ভালো। প্রতিদিনই টাটকা ফল থাকে। দাম বেশি দিয়ে নিলেও আসলটা পাওয়া যায়।”

পাশেই একটি ভবনে ছোট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক কাওসার আহমেদ পরিবারের জন্য জামরুল আর নাশপাতি কিনছিলেন।

“ইফতারে ঠাণ্ডা রসালো ফল খেতে ভালো লাগে। আর এখানকার ফল সব সময় এক নম্বর।ফল কিনতে আমি এখানেই আসি।”