ধসের ক্ষত রাঙামাটির পর্যটনেও

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় জেলা রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে ধরা হয় দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতুটিকে। কাপ্তাই লেক সংলগ্ন এ সেতুকে ঘিরেই রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স।

মিন্টু চৌধুরী রাঙামাটি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 05:39 PM
Updated : 20 June 2017, 04:59 PM

দুটি পাহাড়ের মধ্যে সংযোগকারী সেতুটির গোড়ায় বাম পাশে পাহাড়ের একাংশ গাছসহ লেকের পানিতে ধসে গেছে। সেতু পার হয়ে সামনে এগুলেই পাহাড়ের সিঁড়ির পাশে ধসে পড়া পাহাড়।

সেতুর উপর দাঁড়িয়ে পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকার আশেপাশের পাহাড়গুলো দেখলে মনে হবে কেউ যেন সেগুলো খাড়াভাবে কেটে ন্যাড়া করেছে। 

রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহতম পাহাড় ধসে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাদ যায়নি ঝুলন্ত সেতু এবং এর আশেপাশের এলাকা। 

সোমবার রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স যাওয়ার পথে ওমদা মিয়া লেইনে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে তিন থেকে চারটি এলাকায় ধসে পড়া মাটি জমে আছে। 

কমপ্লেক্স এলাকার শুরুতেই নতুন মোটেল, পরে পুরাতন মোটেল এবং এর সাথেই লাগোয়া ঝুলন্ত সেতু।

সেতু পার হয়ে পাহাড়ে উঠতে গেলেই সিঁড়ির দুটি অংশে পার্শ্ববর্তী পাহাড় বেশ বড় জায়গা নিয়ে ধসে গেছে। সেখানে লাল পতাকা দিয়ে কমপক্ষে তিনটি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন কমপ্লেক্স পরিচালিত ‘পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের’ ব্যবস্থাপক অলক বিকাশ চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন মোটেলের পাশে, সেতুর প্রবেশ মুখের গোড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানেও ধস হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। ঢাকা থেকে পর্যটন করপোরেশনের একটি দল এসে ক্ষতি নিরূপণ করবে বলে জানান অলক চাকমা।   

২০ টাকার টিকেট কেটে ঢুকতে হয় ঝুলন্ত সেতু এলাকায়। দুই ঈদ, পূজা ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচশ জন দর্শনার্থী আসেন এই এলাকায় ঘুরতে।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র ছয়জন দর্শনার্থী এসেছেন বলে জানান পর্যটন কমপ্লেক্সের টিকেট বিক্রির দায়িত্বে থাকা একজন।

তারা বলছেন, বর্ষায় পর্যটকের সংখ্যা কম হলেও এবার পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় প্রাণহানি হওয়ায় লোকজন একেবারেই নেই।

পর্যটন কমপ্লেক্সের নতুন ও পুরনো দুটি মোটেল এবং কটেজ মিলিয়ে পর্যটকদের থাকার জন্য কক্ষ আছে ৮৪টি। গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব কক্ষ পর্যটকশূন্য।

রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এবার ঈদের ছুটিতে প্রত্যাশিত পর্যটক মিলবে না বলে মনে করছেন পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, অন্যান্য বার ঈদের ছুটিতে রাঙামাটি পর্যটন মোটেলের কক্ষের ৮০ শতাংশেই পর্যটক থাকে। এবারও ৭০ শতাংশ বুকিং আছে, কিন্তু কত জন আসবেন, তা বলা মুশকিল।

তবে ব্যবস্থাপক অলক চাকমা আশাবাদী, সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন হলে পর্যটকরাও আসবেন।

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি এলাকার দেবে যাওয়া সড়ক চলাচল উপযোগী করতে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এই সড়কপথেই ঢাকা ও অনান্য জেলা থেকে লোকজন যাওয়া-আসা করেন।

সওজ রাঙামাটি অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে সড়কটি হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা যেতে পারে।

তবে আগামী সপ্তাহের ঈদের আগে সড়কটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার আশা দিতে পারছেন না তিনিও।