মুখ ভার শাড়ি বিক্রেতারা দুষছেন ভারতীয় ভিসাকে

ঈদ সামনে রেখে জমিয়ে বিক্রির প্রত্যাশার বিপরীতে ক্রেতা সমাগম তেমন না থাকায় অনেকের ভারতে গিয়ে ঈদের কেনাকাটার শঙ্কা করছেন শাড়ি বিক্রেতারা।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 05:48 PM
Updated : 13 June 2017, 05:48 PM

মঙ্গলবার রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, মিরপুরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে শাড়ির দোকানগুলোতে ভিড় খুব কম দেখা যায়।

বৃষ্টির ধাক্কা সামলে এদিন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতা উপস্থিতি বাড়লেও খরা কাটেনি শাড়ির দোকানগুলোতে।

এই মার্কেটের লেভেল-৪ এর শাড়ির দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা সমাগম না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন কর্মীরা।

তারা বলছেন, গত বছর ঈদ সামনে রেখে ‘ভারতীয় ভিসা সুবিধা দেওয়ার’ পর সবচেয়ে বেশি ক্রেতা হারিয়েছে শাড়ির বাজার। এবারও সে রকম হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

গত রোজার ঈদ সামনে রেখে গেল বছর জুনে ভারতীয় হাই কমিশন ভিসা ক্যাম্প বসিয়েছিল, যেখান থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি ভারতে ঘুরতে যাওয়ার ভিসা নিয়েছিলেন। আর গত ৫ জুন বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে যাওয়া- আসা সহজ করতে ২৪টি বন্দরে প্রবেশ/প্রস্থানে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানায় ভারতীয় হাই কমিশন।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ‘প্রেমজয় এক্সক্লুসিভ কালেকশন’র বিক্রয়কর্মী সেলিম হোসেন বলেন, এবার ঈদ মৌসুমেও ব্যবসায় মন্দা চলছে।

“ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের এক্সক্লুসিভ সব শাড়ি এনেছি। কিন্তু কাস্টমার তো নাই। কাস্টমার থাকবে কি করে, এক বছরের জন্য তো ফ্রি ভিসা দিয়ে দিছে।

“তারা তো এখানে মার্কেট করবে না। তারা ইন্ডিয়া গিয়ে মার্কেট করে ঈদ করবে। সরকার তো সে পথ করে দিছে। দেশের টাকা বিদেশ চলে যাচ্ছে।”

দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুটি শাড়ি বিক্রি হওয়ার কথা জানিয়ে সেলিম বলেন, “অন্য সময়েও এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।”

তার দোকানের সবগুলো শাড়িই ভারত থেকে আনা হয়েছে বলে জানান সেলিম।

“আমাদের কাস্টমারদের ১০ ভাগ আগে বিদেশ যেত। এখন ৪০ ভাগই বিদেশে চলে যায়।”

এই দোকানে শাড়ি কিনতে আসা নাসরীন বলেন, “যে দাম! কিনব কী করে? বাজেট তো অনেক কম।”

‘মনে রেখ শাড়ীজ’ এর শাখা ব্যবস্থাপক সবুজ বলেন, কম দামি শাড়ি কিছুটা বিক্রি হলেও সার্বিকভাবে বিক্রি খুবই কম।

শাড়ি কম বিক্রি হওয়ার পিছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে ভারতীয় ভিসাও অন্যতম বলে মনে করছেন তিনি।

“বুঝতে পারছি না কেন এত কম বিক্রি হচ্ছে। আগের বছরের শাড়ি দিয়ে ঈদ করবে কি না কে জানে। আগের বছর এমন সময় অনেক বিক্রি হত। কিন্তু এবার দেখতেই তো পারছেন দোকান একেবারে ফাঁকা।”

তিনি বলেন, “বড় লোকরা ভিসা নিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। আর কম আয়ের লোকেরা তো এবার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেই হিসাব মেলাতে পারছে না। এসব কারণে বিক্রি কম হতে পারে।”

‘শাড়ি মিউজিয়াম’র বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, বেনারশী, কাতান, জর্জেট, শিফন, সাটিন, কাঞ্জিবেরাম, সিল্কসহ সব ধরনের শাড়ি রয়েছে তাদের দোকানে।

“কিন্তু সে অনুযায়ী ক্রেতা পাচ্ছি না। যারা দেখছে, তাদের অর্ধেকই কিনছে না। কারণ দামে কুলোচ্ছে না তাদের।”

এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ফাউজিয়া আক্তার বলেন, “শাড়ি তো তেমন পরি না, আর শাড়ির দাম বেশি। তাই থ্রি-পিস কিনছি।”

মিরপুরের বেনারশী পল্লীর শাড়ি বিক্রেতারাও দুষছেন ভারতীয় ভিসাকে।

সেখানকার ‘আপন বেনারশী হাউজ’র বিক্রয়কর্মী আবদুল হান্নান বলেন, “ঈদে তো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন কাস্টমার স্বাভাবিকের তুলনায়ও কম।

 “সরকার তো ফ্রি ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। মানুষ তাহলে দেশে কেনাকাটা করবে কেন? আমরা ভারত থেকে এনে বিক্রি করি, আর কাস্টমার যদি ভারতে যেতে পারে তাহলে আমাদের এখান থেকে কেনাকাটা করবে কেন?

শাড়ির আরেক বাজার ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটেও কেনাকাটা কম হওয়ার জন্য একই সুর শোনা গেল দোকানিদের কাছ থেকে।

মৌমিতা সিল্ক সেন্টারের বিক্রয়কর্মী আসাদ বলেন, “ভারতীয় ভিসা ব্যবসা খেয়ে ফেলছে। কাস্টমার ভারত যাওয়ার অপেক্ষায়, মার্কেটে আসবে কেন?”

তবে শাড়ি কম বিক্রির জন্য থ্রি-পিসের দিকে আগ্রহ বাড়ার কথা বলছেন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘বিশ্ব রঙ’র মিরপুর-২ নম্বরের শাখা ব্যবস্থাপক সাগর মিয়া।

তিনি বলেন, “অন্যান্যা প্রোডাক্টের তুলনায় শাড়ি কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে। থ্রি-পিস ও ওয়ান পিসের চাপ থাকায় হয়ত শাড়িটা বেশি নিচ্ছে না তারা।”

এ মার্কেটে সুতির ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্টের শাড়িগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, আর সুতি বা সিল্কের উপর সুতার কাজ বা এ্যাপ্লিকের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে আড়াইহাজার টাকার উপরে।