ঈদের বিকিকিনিতে বৃষ্টির শঙ্কা

রোজার প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে বেকার সময় কাটানোর পর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠার আশায় ছিলেন বিক্রেতারা। কিন্তু ফের বৃষ্টি তাদের সে আশায় পানি ঢেলে দিয়েছে।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 03:14 PM
Updated : 12 June 2017, 03:15 PM

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি সোমবারও চলতে থাকায়

একরকম ‘ক্রেতা খরার’ মধ্যে দিয়েই গেছে রাজধানীর বিপানীবিতানগুলো।

সামনের দিনগুলোতেও এমন অবস্থায় পড়তে হতে পারে, এমন শঙ্কায় পড়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রোজা শেষে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাবে হতাশাই হয়তো বাড়বে।

এর আগে রোজার প্রথম সপ্তাহে এক দফা বৃষ্টিতে নাকাল হতে হয়েছে বিক্রেতাদের। 

সোমবার রাজধানীর মিরপুর, নিউ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টির কারণে অনেকটাই ক্রেতাশূণ্য এসব বিপণিবিতানগুলো।

আর ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির কারণে দোকান খোলারই সুযোগ পাননি।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে সকাল থেকে ক্রেতা না থাকলেও দুপুরের পর থেকে ক্রেতা আসতে শুরু করে।

এখানকার দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘বাংলার মেলা’র ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম জানান, বেলা বাড়ার পর কিছু ক্রেতা কাস্টমার পেয়েছেন তারা।

“বৃষ্টি তো অবিরত চলছেই। কাস্টমার তেমন আসছে না। যারা আসছেন, তারা দেখছেন, কিনছেন।”

এবার ঈদের বিকিকিনিতে তেমন সাড়া মিলছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “স্যালারি না পাওয়ায় রোজার প্রথমে কাস্টমার ছিল না। আর এখন বিক্রির সময়টাতে হচ্ছে বৃষ্টি। কাস্টমার আসবে কী করে?”

বসুন্ধরা সিটির ‘রিচম্যান’র শপ ইন-চার্জ রেজোয়ান কবির বলেন, “বিকালে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ঈদে তো কেনাকাটা করতে হবে, তাই যাদের গাড়ি আছে, তারা চলে আসছে।”

সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়বে- এমন আশা তার।

এ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ইকরাজ জাহান বলেন, “আজকে বৃষ্টি বলে ভিড় কম হবে, অন্যান্য দিন তো অনেক ভিড় থাকে। তাই বৃষ্টিতে একটু কষ্ট হলেও চলে এসেছি।”

এদিকে যমুনা ফিউচার পার্কেও দিনভর গুটিকয়েক ক্রেতার দেখা মিলেছে।

এখানকার পোশাক ব্র্যান্ড ‘ওয়েস্টিন’ এর ব্যবস্থাপক সম্রাট জানালেন, একেবারেই কাস্টমার পাননি তারা।

“আজ একদমই কাস্টমার আসছে না। রেগুলার সময়ের চেয়েও বিক্রি কম।”

যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে এসেছেন শিরিন সুলতানা। তিনি জানালেন, ঈদের অনেক কেনাকাটা এখনো বাকী, আর সে কারণেই বৃষ্টি মাথায় চলে এসেছেন কেনাকাটা করতে।

“কয়েকদিন তো গরমে বের হতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে গরমটা তো নেই, আর তাই বেরিয়ে পড়লাম। দুইদিন পরে হলেও তো কেনাকাটা করতে হবে। তাই আজই চলে আসেছি।”

এদিকে মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুর দুই নম্বরের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ, মিরপুর এক নম্বরের শাহ আলী প্লাজা, মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স, স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট ঘুরে হাতে গোনা কিছু ক্রেতা দেখা গেছে।

মিরপুর এক নম্বরে কেনাকাটা করতে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ারুল জানান, কয়েকদিন পরই দেশের বাড়িতে যাবেন ঈদ করতে। আর সেজন্যই কেনাকাটা করছেন তিনি।

“আর কয়েকটা দিনই হাতে আছে, বাড়ির সবার জন্য তো কেনাকাটা করতে হবে। পরে সময় হবে না, তাই বৃষ্টিতেই আসতে হলো।”

স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ ‘গ্রামীণ চেক’র ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আর মামুন জানালেন, বৃষ্টি থাকায় ক্রেতা তেমন আসছে না তাদের শো-রুমে। তবে সন্ধ্যার পরে ক্রেতা কিছুটা বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্স আর হাকার্স মার্কেট ছিল একেবারেই ক্রেতাশূণ্য।

প্রিয়াঙ্গন শপিং কমপ্লেক্সের ‘বনি ফ্যাশন’র কর্ণধার মোহাম্মদ আলী বলেন, “কাস্টমার একদমই নাই। এমনিতেই এ ঈদে বেচা-বিক্রি কম, তার উপরে বৃষ্টির কারণে তো আরও খারাপ অবস্থা।”

হকার্স মার্কেটের ‘কালঞ্জয়ী শাড়ী হাউজ’র বিক্রেতা জসিমও বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ।

তিনি বলেন, “এইবারের ঈদে বিক্রি এমনিতেই কম, তার উপরে বৃষ্টিতে কাস্টমারের আকাল পড়ছে।”

“রোজার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল, এরপর আবার প্রচণ্ড গরম। এখন আবার বৃষ্টি, এটাও মনে হচ্ছে কয়েকদিন থাকবে। তাহলে বিক্রিটা করব কখন?”

বিকালে নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নূরজাহান সুপার মার্কেটে বেশ কিছু ক্রেতার দেখা মেলে। 

নূরজাহান সুপার মার্কেটে প্যান্ট কিনতে আসা জুবায়ের বলেন, “আজ একটু ফ্রি থাকায় কেনাকাটা করতে এলাম। প্রতিদিন তো সময় বের করতে পারি না।”

নিউ মার্কেটের ‘হাজী পাঞ্জাবী স্টোর’এ বাবার দোকান দেখাশোনা আব্দুর রহমান বাহালুল। 

তিনি বলেন, “কাস্টমার কয়েকজন এসেছেন সকাল থেকে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে তেমন কেনাবেচা তো হচ্ছে না। আর বৃষ্টি তো থামেও না।”