ঈদ বাজার: আগ্রহ বেশি সুতি পাঞ্জাবিতে

গ্রীষ্মের খরতাপে স্বস্তিদায়ক পোশাকের খোঁজে ঈদের কেনাকাটায় তরুণ-যুবাদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে সুতি পাঞ্জাবি।   

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2017, 04:23 PM
Updated : 10 June 2017, 04:26 PM

শনিবার রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন পোশাকের দোকান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ফ্যাশন হাউজের কর্ণধাররা বলছেন, এই গরমে ক্রেতাদের আরামদায়ক পোশাক দিতে সুতি পাঞ্জাবিতে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, যাতে সাড়াও মিলছে ব্যাপকভাবে।

বিকালে এলিফ্যান্ট রোডের পোশাকের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য পোশাকের তুলনায় পাঞ্জাবির কেনাবেচা বেশি হচ্ছে।

ছেলেদের পোশাকের ব্র্যান্ড ‘ক্যাটস আই’-এর বিপণন বিভাগের প্রধান কামাল উদ্দীন পিয়াল বিকালে তাদের এলিফ্যান্ট রোডের শো-রুম পরিদর্শনে আসেন।

এসময় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রীষ্মের কথা মাথায় রেখে আমরা সুতির পাঞ্জাবিগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। শুধু এখানে না, আমাদের সবগুলো বিপণিবিতানেই সুতি পাঞ্জাবিগুলোর চাহিদা বেশি।”

সুতির উপরে সুতার কাজ করা পাঞ্জাবিগুলো ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এর বাইরেও তারা বিভিন্ন নকশার নতুন পাঞ্জাবি এনেছে জানিয়ে পিয়াল বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারও নিজস্ব ডিজাইনার দিয়ে এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবিগুলো বানানো হয়েছে। সেগুলোতে আগ্রহ থাকলেও সুতিই চলছে বেশি।”

আরেক পোশাক ব্র্যান্ড ‘মেনজ ওয়ার্ল্ড’-এর এলিফ্যান্ট রোডের শাখা ব্যবস্থাপক তানভীর আনামও এখন পর্যন্ত সুতির পাঞ্জাবি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়ার কথা জানান।

তিনি বলেন, “একটু কম দামি পাঞ্জাবিগুলো পনেরশ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে মানুষ বেশি কিনছে।”

এ এলাকার সুবাস্তু অর্কিড শপিং সেন্টারের ‘হৃদিমা পাঞ্জাবি হাউজের’ ব্যবস্থাপক মনির জানান, বাহুবলী, সুলতান, কাতান, সিল্ক, সুতিসহ সব ধরনের পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের সংগ্রহে।

“যেহেতু গরম সে কারণে সুতির উপর কাজ করা হালকা রংয়ের পাঞ্জাবিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।”

নিজেদের তৈরি পাঞ্জাবি ছাড়াও ভারত থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি এনেছেন তারা।

এর মধ্যে ‘সুলতান’ ও ‘বাহুবলী’র বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সুলতান আর বাহুবলী সিনেমায় নায়কের পরিহিত গলায় কাজ করা পাঞ্জাবিগুলোকেই সুলতান ও বাহুবলী বলা হচ্ছে।

“মূলত এগুলো তেমন কিছুই না। ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্যই এসব নাম দেওয়া। ক্রেতারা এসে এগুলো আছে কি না দেখতে চায় এবং এগুলোর চাহিদাও রয়েছে।”

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজগুলোতেও তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে পাঞ্জাবি।

ফ্যাশন হাউজ ‘রঙ বাংলাদেশ’ এর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম হীরা বলেন, “কটনের উপর প্রিন্ট, ব্লক এবং কাজ করা পাঞ্জাবিগুলো এবারের মূল আকর্ষণ। তবে বিক্রি ততটা ভালো না।”

১২৫০ থেকে ২২০০ টাকার পাঞ্জাবিগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।

যমুনা ফিউচার পার্কের পোশাকের দোকানগুলোতেও সুতির পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি বলে বিক্রেতারা জানান।

এ বিপণিবিতানে ‘আড়ং’ এর শো-রুমের বিক্রয়কর্মী ফজলে রাব্বী বলেন, “এবার মূলত সুতি ও সিল্কের পাঞ্জাবিগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।

“তীব্র গরম থাকার কারণেই ক্রেতারা সুতি পাঞ্জাবিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।”

দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দামের সুতির পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।

এই বিপণিবিতানে ইনফিনিটি মেগা মলের বিক্রয়কর্মী শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের গর্জিয়াস এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবির সংগ্রহ থাকলেও বেশি বিক্রি হচ্ছে সুতি পাঞ্জাবিগুলো।”

যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে আসা চিকিৎসক নাহিদ ফারহানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাবা ও স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন তিনি।

“গরমে তো সুতি ছাড়া অন্য কাপড় পরে থাকা সম্ভব না। এ কারণেই সুতি পাঞ্জাবি কিনেছি।”

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ ‘ব্যতিক্রম’র কর্ণধার ওমর ফারুক বলেন, “১৪ রোজা চলে গেলেও তেমন বিক্রি হয়নি। এবার সুতি, এ্যাম্ব্রয়ডারির পাঞ্জাবিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।”

সুতি কাপড়ের উপর সুতার কাজের ও এ্যাম্ব্রয়ডারির পাঞ্জাবিগুলো এক হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ মার্কেটের আরেক ফ্যাশন হাউজ ‘কে ক্র্যাফট’ এর শো-রুমের বিক্রয়কর্মী রবিউল হোসেন জানান, এবার সুতি ছাড়াও এ্যান্ডিকটন, সিল্কের পাঞ্জাবিগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তারা।

সিল্কের মধ্যে রাজশাহীর সিল্ক সাড়ে চার হাজার, জয়েস সিল্ক এক হাজার ৮০০ ও সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করছে কে ক্র্যাফট।

“তবে এক থেকে আড়াই হাজার টাকার সুতি পাঞ্জাবিগুলোই চলছে বেশি,” বলেন রবিউল।

আজিজ সুপার মার্কেট থেকে সুতি পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট কিনেছেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী আফতাব আহমেদ।

“একটু সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা করা যায়, এ কারণেই এ মার্কেটে এসেছি।”