আবগারি শুল্ক: অর্থ ‘পাচারের’ শঙ্কায় এফবিসিসিআই

ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় অর্থ ‘পাচার’ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। চলতি বাজেটে প্রস্তাবিত এই শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করেছে সংগঠনটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2017, 11:54 AM
Updated : 3 June 2017, 03:02 PM

শনিবার মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে মতামত জানাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার দিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও এদিন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ছাড়াও অর্থ বিল, অন্যান্য প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মতামত তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “ব্যাংক খাত থেকে আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি।

“মূলধন গঠন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকরা ব্যাংক লেনদেন করে থাকেন। বাজেটে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বিভিন্ন হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে আমানতকারী আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়া অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

“তাছাড়া স্বাস্থহানিকর পণ্য ছাড়া অন্য কোনো খাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা সমীচীন নয়,” বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেনে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

তবে শুল্কমুক্তসীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে বছরের যে কোনো সময় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেনে শুল্ক দিতে হতো না, এখন ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে না।

ভ্যাট আইনে বিশেষ সংশোধনী প্রস্তাব

বাজেটে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত ব্যবসায়ীদের।

শফিউল ইসলাম বলেন, “ক্ষুদ্র, গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটির শিল্প ইত্যাদি প্রান্তিক খাতের বিকাশে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের হিসাব সংরক্ষণের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অব্যাহতির এ সীমা আরও বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

বাজেট প্রস্তাবে টার্নওভার করের সীমা এক কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষিতে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে টার্নওভার করের সীমা ৫ কোটি টাকা বা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন শফিউল।

করদাতাদের সাথে মূসক কর্মকর্তাদের বিরোধ এড়াতে টার্নওভারের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্তির সীমা এবং নিবন্ধন সীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়া কি হবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির প্রস্তাব করে এফবিসিসিআই।

ভ্যাট আইন প্রয়োগে একটি পর্যবেক্ষক দল তৈরিরও প্রস্তাব করা হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে স্বাধীন সংস্থা কর্তৃক ‘ইম্পেক্ট অ্যাসেসমেন্টের’ কথা আমরা বলেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্বাধীন সংস্থা কর্তৃক ইম্পেক্ট অ্যাসেসমেন্টের জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।”

১৫ শতাংশ ভ্যাট সোনার বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে এফবিসিসিআিই’র পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বর্ণের ওপর এই ভ্যাট না দিয়ে মজুরির ওপর দিলে শিল্প রক্ষা পাবে। 

“বাজেটে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য তুলে দিয়ে জুয়েলারি খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যাতে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ভরিতে প্রায় ৭ হাজার টাকা ভ্যাট প্রদান করতে হবে ক্রেতাদেরকে। পার্শ্ববর্তী দেশে মূসকের হার কম থাকায় ক্রেতারা স্থানীয় বাজার থেকে স্বর্ণালংকার না কিনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে স্বর্ণালংকার ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ হবে। এতে স্থানীয় জুয়েলারি শিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি সরকার রাজস্ব হারাবে। এ অবস্থায় জুয়েলারি শিল্পের স্বার্থে শুধুমাত্র মজুরির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করছি।”

রাজস্ব নীতি বাস্তবায়ন/রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান হয়রানি নিরসনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইর একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বাজেটের প্রস্তাবনা অনুযায়ী স্থানীয় লিফ স্প্রিং শিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করেন শফিউল ইসলাম।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত লিফ স্প্রিংয়ের মৌলিক কাঁচামাল (এইচএস কোড ৭২১৪.৯১.১০) এর উপর ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে অথচ আমদানিকৃত তৈরি লিফ স্প্রিংয়ের (এইচ এস কোড ৭৩২০.১০.০০) উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে স্থানীয় লিফ স্প্রিং শিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

“এ অবস্থায় স্থানীয় শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে লিফ স্প্রিংয়ের মৌলিক কাঁচামালের উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার এবং আমদানিকৃত তৈরি লিফ স্প্রিংয়ের উপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক বহাল রেখে ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছি,” বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।