বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পর ফেডারেশন ভবনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম এ দাবি জানান।
টার্নওভার করের সীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি করে ৪ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
“বর্তমান প্রেক্ষাপটে টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে টার্নওভার করের সীমা ৫ কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি,” বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তবে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক কথায় ভালো বা মন্দ মন্তব্য না করে ক্ষেত্র বিশেষ প্রশংসা এবং কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের সংশোধনী প্রস্তাব তুলে ধরেন শফিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমি তাৎক্ষণিকভাবে যা বলার প্রয়োজন মনে করেছি সেগুলো বললাম। গতানুগতিক ধারায় কোনো বিশেষণে এই বাজেটকে বিশেষায়িত করতে চাই না। এটি প্রস্তাবিত বাজেট, চূড়ান্ত নয়।
“যেসব দাবি বাস্তবায়িত হয়নি তা আলোচনা সাপেক্ষে হতেও পারে। এছাড়া দুদিন পর আমাদের বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ শেষে বাজেট নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলব।”
ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক টার্নওভার সীমাও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী দিলেও তারা চাইছে ৫০ লাখ টাকা।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআই বলছে, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়ানোর প্রস্তাব থাকলেও বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় আয়সীমা ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন সংগঠনটির সভাপতি।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে এফবিসিসিআই ও এনবিআরের সমন্বয়ে এর সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক হার নির্ধারণের প্রস্তাব বাজেটে রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে সিঙ্গেল রেট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এত এসএমই খাতসহ দেশের শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি বলেন, ব্যক্তি করদাতার প্রদর্শিত নীট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের হার ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ওপর শূন্য শতাংশের পরিবর্তে এফবিসিসিআই থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য শতাংশ সারচার্জের হার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
“বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং শিল্পায়নের স্বার্থে শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের উপর ৫ শতাংশ অগ্রীম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে অগ্রীম আয়কর প্রত্যাহার করা হয়নি, যা শিল্পের বিকাশকে ব্যাহত করবে।”
তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানি শিল্পের জন্য উৎসে কর কর্তনের হার শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি করলেও বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে শফিউল ইসলাম বলেন, “এতে আমানতকারীরা আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়া অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। সুতরাং আবগারি কর আগের অবস্থায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এছাড়া রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে হয়রানি নিরসনে এনবিআর ও এফবিসিসিআইয়ের একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে তারা।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজেটের কিছু উদ্যোগের প্রশংসাও করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বর্ধিত হারে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে বর্তমান শুল্কস্তর যথাক্রমে ১ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
প্রস্তাবিত বাজেটে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ইত্যাদি খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এবং মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে দুটি উৎসব ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ই-কমার্স থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ‘অন্যান্য দেশের ন্যায়’ এই খাতের করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহার চেয়েছে এফবিসিসিআই।
শফিউল ইসলাম বলেন, “বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে গতি আসবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ আশা করছি।”