‘প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান এবং ব্রান্ডিং প্রয়োজন’

টেকসই ও সুষম উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 12:27 PM
Updated : 30 May 2017, 12:27 PM

এ ধরনের কল্যাণমূলক কাজের সঠিক প্রচারণা চালিয়ে প্রতিবন্ধী কর্মসংস্থানকে ব্র্যান্ডিং করাও দেশের ব্যবসা- বাণিজ্যের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মত তাদের।

মঙ্গলবার ঢাকায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ (সিবাই) আয়োজিত প্রতিবন্ধী কর্মসংস্থান বিষয়ক সেমিনারে বক্তরা এ মতামত দেন।

সেমিনারে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, অংশগ্রহণমূলক কর্মক্ষেত্র ছাড়া টেকসই ও সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেজন্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

“বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিয়ে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক খাত।”

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বড় একটি চিত্র বলে মত দেন মন্ত্রী।

‘ইনক্লুসিভ বিজনেস: কুড ইট লিড টু হায়ার প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড বেটার ওয়ার্কিং কনডিশন?’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিবন্ধী কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন পোশাকখাতের প্রতিষ্ঠন অনন্ত গ্রুপ, শিন শিন গ্রুপ ও বিটপী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।

বাংলাদেশে কেয়া কসমেটিকস, বেক্সিমকো, রেটেনা, অনন্ত গ্রুপ, শিন শিন গ্রুপ, বিটপী গ্রুপসহ প্রায় ৯৩টি কোম্পানি তাদের জনশক্তির মধ্যে প্রতিবন্ধীদের রেখেছেন বলে সেমিনারে জানানো হয়।

শিন শিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো, সোহেল সাদাত বলেন, “শারীরিক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা মানুষদের নিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ। তাদের জন্য কিছু করা আমাদের দায়িত্ব ছিল। ২০১৬ সাল থেকে এধরনের ইনক্লুসিভ ব্যবসা শুরু করি। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করি আমরা।”

অন্তন্ত গ্রুপের ইনামুল হক বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর প্রতিবন্ধীদেরকে সুবিধাজনক কর্মসংস্থান দিয়েছে তার কোম্পানি।

বিটপী গ্রুপের এমডি মিরান আলী বলেন, এখনকার অনেক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে রয়েছে, যা প্রতিবন্ধীদের জন্য খুবই উপযোগী। তাই প্রতিবন্ধীদের এসব কাজে নিয়োগ দিলে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের পাশাপাশি ভালো ফলাফলও পাওয়া যায়।

সেমিনারে এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই শারীরিক প্রতিবন্ধীতার শিকার। আর বাংলাদেশে এর হার ৭ থেকে ১০ শতাংশ। এদের অধিকাংশই কর্মহীন, অবহেললিত। বিশেষ করে নারী প্রতিবন্ধীরা সমাজে কর্মপরিবেশ থেকে বেশি বঞ্চিত হন।

প্যানেল আলোচনায় সিবাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সমাজের বড় একটি অংশ। তাদের দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরির পরিকল্পনা সফল হবে না। সে কারণে সিবাই অন্যান্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজ করছে।

“২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিবাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে তার ফলাফল দেখা যাচ্ছে কয়েকটি পোশাক কারখানায়।”

এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “তৈরি পোশাকখাতে প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগানোর ধারণা কয়দিন আগেও আমার ছিল না। এ ধরনের উদ্যোগ ও সভা সেমিনারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা ‍সৃষ্টি হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক ফরহাদ আনোয়ার বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করলে পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে। তাই পোশাক শিল্পে রানাপ্লাজার মতো নেতিবাচক প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিয়েও আলোচনা হতে হবে। ইতোমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বের কাছে সেই বিষয়টি তুলে ধরা দরকার।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অনেক পোশাক কারখানায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কাজ করছে। তারা কর্মক্ষেত্রে অনেক ভালো দক্ষতা দেখাচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও নতুন নতুন লোক কিভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় সেই লক্ষ্য কাজ করতে হবে।  

অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনে আইএলও কর্মকর্তা কিশোর কুমার সিং জানান, প্রতিবন্ধী কর্মজীবীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই সবল মানুষদের সমপরিমান কাজ করতে পারেন। ৮৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী চাকরিজীবী কর্মক্ষেত্রে ভালো উপস্থিতির সুনাম অর্জন করেন।

৭৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেদ্যোক্তা তাদের প্রতিবন্ধী জনশক্তির কাজে খুশি, তাদের কাজ আশাতীত ভালো।