সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নুর উপস্থিতিতে এক বৈঠকের পর বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রতিবছরই ২০ রোজার মধ্যে উৎসব ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করি। এবারও ২০ রোজার মধ্যেই বোনাস দিতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে।”
প্রায় প্রতি বছরই ঈদ বোনাস সময়মতো না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে শ্রমিকদের কর্মসূচি পালনের প্রেক্ষাপটে সোমবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর কমিটির’ ৩৪তম সভায় বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।
সভায় বিজিএমইএ সহসভাপতি নাছির বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মালিকপক্ষ ঈদের আগে জুন মাসের ১০ দিন অথবা ১৫ দিনের বেতনও পরিশোধ করবে।
তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে এখন গার্মেন্টস শিল্পের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গত ১০ মাসে আমাদের গ্রোথ হল ২ দশমিক ২১ শতাংশ, যেখানে গত ১০ বছরে এভারেজ গ্রোথ ছিল ১৩ শতাংশ।”
প্রতিটি কারখানা যেন ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে, সে বিষয়ে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে বলে সভায় জানান তিনি।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের মতো, এছাড়া নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সমিতি বিকেএমইএর সদস্য দুই হাজারের বেশি। দুই খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি বলে শিল্প মালিকদের দাবি।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিষয়ে ‘কঠোর হচ্ছে’ সরকার
সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বিষয়ে কঠোর হওয়ার কথা বলেন।
অনিবন্ধিত সংগঠনগুলোকে কাজ করতে না দেওয়া এবং নিবন্ধিত সংগঠনগুলোকে আইনের আওতায় আনার কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “যেসব শ্রমিক সংগঠন শ্রম আইন অনুযায়ী অনিবন্ধিত, সেসব সংগঠনের বিষয়ে দেখার দরকার আছে। কতগুলো সংগঠন অনিবন্ধিত, যারা গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে, এর একটি তালিকা করা দরকার। এই তালিকা করে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হবে।
“চিঠিতে তাদেরকে (অনিবন্ধিত সংগঠন) বলা হবে, আপনারা অনিবন্ধিত, তাই আপনারা শ্রমিক এলাকায় গিয়ে শ্রমিক সংগঠন পরিচয় দিয়ে যে কাজ করছেন, সেটা আইন অনুসারে করা যায় না। আইন অনুসারে তাদেরকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করতে হবে।”
দেশে আট হাজার নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠন রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ আইন অনুসারে চলে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শ্রমিক ইউনিয়ন, বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক ফেডারেশন আইন মেনে রিটার্ন সাবমিট (কার্যক্রম অবহিত) করে না। আমরা যদি আইন অনুযায়ী তাদের দেখতে চাই, তাহলে ৫০ শতাংশ সংগঠন বাতিল হয়ে যাবে। আলোচনার করে এগুলো নিয়মে আনতে হবে।”
বহু ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জড়িত এবং এসব সংগঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলে মনে করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে পোশাক শ্রমিকসহ অন্যান্য কারখানার শ্রকিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে সভায় বেশ কয়েকজন আলোচক তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শ্রমিকদের যেসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেই বিষয়েও দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারিভাবে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তবে তা সীমিত আকারে। তবে বেসরকারিভাবে শ্রমিকদের কারা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে আইন অনুযায়ী তাদের অনুমতি আছে কিনা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো তাদের সামর্থ আছে কিনা তা দেখতে হবে।”
যেসব এনজিও শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে তাদের তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ওইসব এনজিও সম্পর্কে এনজিও ব্যুরোতে চিঠি দেওয়া হবে, ব্যুরো থেকে জানতে চাওয়া হবে ওইসব এনজিওকে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার কোনো অনুমতি দেওয়া আছে কিনা। শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার মতো যেসব এনজিওর অনুমোদন থাকবে না, সেগুলোর বিষয়ে শ্রম আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এছাড়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত এনজিওগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলেছেন মুজিবুল হক।
শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান, জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি এবং জেলা প্রশাসক, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।