আশায় সাজছে ঈদ বাজার

রোজার শুরুতেই ঢাকার বিপণীবিতনগুলোতে উঠতে শুরু করেছে ঈদ পোশাক, এখনও ক্রেতা সমাগম না হলেও ভালো বিক্রিতে গতবারের ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2017, 06:07 AM
Updated : 29 May 2017, 06:07 AM

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট, চাঁদনি চকের খুচরো ব্যবসায়ীরাও এ বছর ভালো বিক্রির আশা করছেন।

তারা বলছেন, গতবছর জুলাইয়ে রোজার ঈদের সপ্তাহখানেক আগে গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি তাদের। এবার সেটা পুষিয়ে নিতে চান তারা।

এই প্রত্যাশায় নানা ডিজাইনের নতুন নতুন ঈদ পোশাকে ক্রেতা আকর্ষণের প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজসহ পোশাকের দোকানগুলোতে।

রোজার প্রথম দিন রোববার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে ঈদ পোশাক চলে এলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। তবে এ নিয়ে হতাশা নেই বিক্রেতাদের। তাদের অভিজ্ঞতা হল, রোজার প্রথম কয়েক দিন পার হলেই চিত্র বদলাতে শুরু করবে।

ফ্যাশন হাউজ ‘ইয়োলো’র জ্যেষ্ঠ নির্বাহী তানভীর আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে গত ১২ মে থেকেই নতুন পোশাক দোকানে তুলছেন তারা।

“গত বছর তো গুলশান ট্রাজেডির কারণে কেনাকাটা কিছুটা কম ছিল। আশা করছি, এবার অনেক বেশি বিক্রি হবে। আগামী শুক্রবার থেকেই ক্রেতাদের ভিড় শুরু হয়ে যাবে। তখন তো ভিড়ের মধ্যে কথা বলারও সময় থাকবে না।”

একই প্রত্যাশার কথা বলেন ‘ওটু’ ফ্যাশন হাউজের ম্যানেজার সোহেল রানা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঈদের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক চলে এসেছে। তবে এখন কেনাকাটা কম। প্রথম রোজায় পরিবারের সাথে ইফতার করার জন্য অনেকেই শপিংয়ে বের হন না। আশা করি, এক দুই দিন গেলেই ক্রেতা বাড়তে থাকবে।”

রোজা শুরু ছাড়াও মাসের শেষ সপ্তাহ হওয়ায় ক্রেতা কম বলে মনে করছেন বসুন্ধরা সিটিতে ‘ক্যাটস আই’ এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার ইব্রাহিম হোসেন।

তিনি বলেন, “মাসের শেষ দিক হওয়ায় দেখা যায় অনেকের হাতে টাকা নেই। আবার অনেকে কিছুদিন আগেই হয়ত রোজার জন্য কেনাকাটা করেছেন।... বেতন হলেই দেখা যাবে জমজমাট ঈদ বাজার।”

পোশাক ব্র্যান্ড সেইলরের ব্রাঞ্চ ম্যনেজার শাহ আলম আশা করছেন, ৫ জুন থেকেই পুরোদমে শুরু হবে ঈদের কেনাকাটা।

“তখন হাঁটার জায়গাও পাওয়া যাবে না। বছরের এই একটা মাসই তো ধুমিয়ে বিক্রি করতে পারি, তাই ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি।”

স্মার্টটেক্সের বিক্রয়কর্মী সিমরান আক্তার সিনথিয়া বলেন, “এবারের ঈদে এই প্রথম আমরা গাউন তুলেছি শো-রুমে। কিন্তু কাস্টমার একেবারে নেই বললেই চলে। তবে ৫ রোজার পর থেকে ঈদ বাজার জমজমাট হবে আশা করি। তখন এই ঘাটতিটা পুষিয়ে যাবে।”

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের মতোই ক্রেতাশুন্য দেখা গেছে নিউ মার্কেট ও চাঁদনি চকের পোশাকের দোকানগুলো। বিক্রেতারা বলছেন, সাধ্যের মধ্যে পছন্দসই পোশাক কিনতে দ্রুতই ক্রেতাদের চাপ বাড়বে এসব বিপণী বিতানে।

নিউ মার্কেটের হেনা ফেব্রিক্সের মালিক মোহাম্মদ ইউনুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন পোশাক এনেছি, কিন্তু বিক্রি তেমন নেই। গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে।

“এদিকে তো কম আয়ের মানুষ বেশি আসে। বেতন না পেলে তো তারা মার্কেটে আসবে না। কয়দিনের মধ্যে আশা করি বিক্রি বাড়বে।”

চাঁদনি চকের পোশাক বিক্রেতা স্বপন কবির বলেন, “অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয়। তাই পোশাকও তুলেছি বেশি। কিন্তু এখন তো ইফতার আর রোজার খাবার নিয়েই মধ্যবিত্তের ব্যস্ততা। তবে এ সপ্তাহের শেষ দিকেই ভিড় শুরু হয়ে যাবে।”

ভিড় বাড়ার আগেই ঈদের পোশাক কেনা শুরু করে দিয়েছেন কেউ কেউ।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে পাঞ্জাবি কিনতে আসা ফরিদ আহমেদ বলেন, “সামনে ভিড় বাড়বে, তখন দেখা যাবে একটা পোশাক ভালো করে দেখেও কেনার সুযোগ থাকবে না। তাই চাপ বাড়ার আগেই কেনাকাটা করতে আসলাম। অনেকগুলো দোকান ঘুরে কিছু কিনেছি, আরও কিছু কিনব।”

নিউ মার্কেটে কাপড় কিনতে আসা রেজাউল ইসলাম বলেন, “একটু আগেভাগেই কেনাকাটা করে ফেলছি এবার। শেষদিকে দাম থাকে বেশি, কাপড়ের মানও ভালো পাওয়া যায় না। তাই কিনে ফেললাম এখনই।”

ঈদ বাজারে পোশাকের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকির দাবি জানান চাঁদনি চকে কেনাকাটা করতে আসা নাইমা হামিদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবারই দেখা যায়, ঈদ এলে কাপড়ের দাম অনেক চড়ে যায়। আশা করি, এসব নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।”