সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘আকাশ ছোয়ার স্বপ্নপূরণে’ বিমান

বিমান ভ্রমণ করিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘আকাশ ছোয়ার’ স্বপ্ন পূরণ করল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2017, 01:47 PM
Updated : 27 May 2017, 01:47 PM

শনিবার ভোররাতে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত মিরপুর সরকারি শিশু পরিবার ও তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের ১৫ বছরের কম বয়সী ত্রিশ শিশু বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা থেকে সিলেটে উড়াল দেয়।

এরপর সিলেটে দিনব্যাপী ঘোরাঘুরি শেষে দুপুরে ঢাকায় ফিরে বিমানের বলাকা কার্যালয়ে এলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আলী তাদের বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে বলেন।

তিনি বলেন, “তোমাদের বিমানে চড়তে কেমন লেগেছে বলো। কার কেমন লেগেছে বলো।”

প্রথমে কিছুটা সংকোচ থাকলেও কর্মকর্তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে কথা বলা শুরু করে বিমানে চড়া শিশুরা।

তেজগাঁও শিশু পরিবারের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী বেগম বলেন, “বিকালে খেলার মাঠের উপর দিয়ে কোনো প্লেন ছুটে গেলে সব বন্ধুরা মিলে ছুটে যেতাম। কখনো ধারণা ছিল না ওটায় চড়তে পারবে।

“বড় হয়ে ভাল কিছু করে একদিন প্লেনে চড়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্ন এখন সত্য হয়েছে। এজন্য বিমানকে কখনো ভুলব না।”

এসময় বিমান সিইও মোসাদ্দিক আলী সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুদের দেশকে ভালবাসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশের ভাল হয় এমন কাজ করতে হবে। বিমান যেন ভালভাবে এগিয়ে যায় সেজন্য তোমরা দোয়া করবে। আমরা তোমাদের দোয়া চাই।

“এখন তোমরা কারো সহায়তা নিয়ে বিমানে চড়ে তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছো। ভবিষ্যতে তোমরা নিজ যোগ্যতায় বিমানে ভ্রমণ করবে বলে বিশ্বাস করি।”

মিরপুর শিশু পরিবারের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “আজকে যখন বিমানে চড়লাম, দেখলাম আমাদের উপরেও আকাশ আর আমাদের নিচেও আকাশ। মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় কোনো পাখি।”

শিশুদের ভ্রমণ করানোয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশংসা করে তেজগাঁও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন বলেন, “এই বিমান ভ্রমণ শিশুদের মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিমান সময় সময় এভাবে তাদের ভালো কাজ চালিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস রাখি।”

এসময় ভবিষ্যতেও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিমান ভ্রমণ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আলী। 

এরপর শিশুদের মাঝে ঈদের উপহার বিতরণ করেন তিনি।

আনন্দে সারাদিন

দুই শিশু পরিবারের ৩০ শিশু ভোর পৌনে ৪টার দিকে তাদের তত্ত্বাবধায়কসহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ে হয়।

এর মধ্যে ১৫ জন ছেলের পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি, কালো প্যান্ট, নীল ক্যাপ; আর গোলাপি রংয়ের পোশাকে সাজগোজ করে মেয়েরা।

বিমানবন্দরে আসার পর গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন; আবার কেউ কেউ সেলফি তোলায় ব্যস্ত সময় পার করতে থাকে। শিশুরা কখনো ভিক্টরি চিহ্ন দেখিয়ে আবার কখনো হেসে ছবি তোলায় তাদের সহায়তা করেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে উঠার পর তাদের উপস্থিতির ঘোষণাও দেওয়া হয়।

এরপর ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছানোর পর বিমানটির পাইলট নওশাদ আতাউল ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “দীর্ঘ দিনের কর্মজীবনে একসঙ্গে এত শিশু নিয়ে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতাটা আসলেই অন্যরকম। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শৈশবে নিয়ে গিয়েছে। সব শিশুর জন্য শুভকামনা।”

পাইলটের এমন কথার সময় শিশুদের কেউ কেউ বড় হয়ে পাইলট হতে চাওয়ার স্বপ্নের কথাও প্রকাশ করে।

মিরপুর সরকারি শিশু পরিবারের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহিন বলেন, “আগে কোনোদিন বিমানে চড়ি নাই। প্রথমে বিমান আকাশে ওঠার সময় ভালো লাগে। তবে প্লেন নিচে নামার সময় কিছুটা ভয় লাগে। এখন মনে হচ্ছে বড় হলে বিমান চালাতে পারলে খুব ভাল হবে। আমি ভবিষ্যতে পাইলট হইতে চাই।”

এরপর সিলেটের পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা, মাঠে খেলাধুলা ও সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানে ঘুরে ছবি তুলে হৈচৈ শেষে তারা সিলেটের হজরত শাহজালাল (রা.) মাজার জিয়ারত করে।

এরপর ফুরফুরে মেজাজে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে শিশুরা।

তেজগাঁও শিশু পরিবারের শিক্ষার্থী সোমা আক্তার বলেন, ‍“আগে ক্রিকেটার হয়ে প্লেটে করে বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। এখন বিমানে চড়ে মনে হল- এখানে কোনো কাজ করতে পারলে সব সময়ই বিমানে চড়া যাবে।”

একই প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমু আক্তার সাদিয়া বলেন, “বিমানে ভ্রমণের কথা কোনোদিন ভুলব না। এটা ছিল স্বপ্ন, যা এখন সত্য হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন বিমানে চড়তে পারি এজন্য নিজেদের প্রস্তুত করব।” 

সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থাপনা বলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ।

তিনি বলেন, “বিমানের রয়েছে স্থায়ী ও মজবুত সামাজিক দায়বদ্ধতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিমান অবদান রেখে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বিমান ভ্রমণ।”