কর্মীদের বরখাস্তের হুমকিতে উত্তেজনা শেভরনে

চীনা একটি কোম্পানির কাছে বাংলাদেশের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর খবরে অনিশ্চয়তা থেকে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের বরখাস্তের হুমকি দেওয়ার পর উত্তেজনা দেখা দিয়েছে শেভরনে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2017, 05:48 PM
Updated : 23 May 2017, 07:35 PM

যুক্তরাষ্ট্রের এই তেল কোম্পানির বাংলাদেশের কার্যালয়ে মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগবিতণ্ডা হয়। নিরাপত্তা রক্ষী দিয়ে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ জানিয়ে থানায় জিডিও করেছে কর্মচারী ইউনিয়ন।

চীনের কনসোর্টিয়াম হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের হাতে ২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও কর্মীদের বিষয়ে শেভরন কিছুই বলছে না বলে কর্মচারীদের অভিযোগ।

বাংলাদেশে কোম্পানির কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহরিয়ার আবেদিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের অনুমোদন না নিয়েই মালিকানা বিক্রির কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “গত আট মাস ধরে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চললেও আমাদের গ্রাচুইটিসহ অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে কোনো বক্তব্য কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না। ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাবেও সায় দিচ্ছে না।”

এই অবস্থায় শ্রম আইনের ২১০ ধারা অনুসারে ‘শিল্প বিরোধ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট)’ ঘোষণা করেন কর্মচারীরা, যাতে আইন অনুযায়ী মালিক পক্ষকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যায়।

শাহরিয়ার বলেন, “এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল (সোমবার) তারা আমাদের সাথে বসে। তবে আমাদের ডিমান্ড সম্পূর্ণ নাকচ করে দেয়। আমরা গত ১০ বছর ধরে ৫ শতাংশ পাওনা সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু আলোচনায় এগুলো রাখেনি তারা।”

উল্টো মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ ই মেইল করে চাকরিচ্যুতসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেয় বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার সকালে গুলশানে শেভরন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে যান কর্মচারীরা। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও কয়েকঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার ঘটনা ঘটে।

গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাকরির বিভিন্ন বিষয়ে মালিক- শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার কথা তিনিও শুনেছেন।

দুপুর পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকার অভিযোগ তুলে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য গোলাম তানজীব।

এদিকে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় শেভরন জানিয়েছে, কর্মীদের দুই বছরের চাকরির নিশ্চয়তা এবং নয় মাসের বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেওয়ার প্যাকেজ দিয়েছেন তারা। কিন্তু কর্মীদের প্রতিনিধিরা এই প্যাকেজ নিচ্ছে না।

শেভরন বাংলাদেশে ছয়শ কর্মী বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছেন।

তাদের পাঠানো ই মেইলে শেভরন কর্তৃপক্ষ মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন ও কার্যকর করতে সব কর্মীকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে।

“এই অনুরোধ প্রতিপালনে অস্বীকৃতি জানানো কর্মীদের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের অভিযোগ আনা হবে।”

কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার জানান, মূলত মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়েই অচলাবস্থার সূত্রপাত।

“সরকারের অনুমতি ছাড়াই কর্মীদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে মালিকপক্ষ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে। গতকাল (সোমবার) ম্যানেজমেন্টকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম ‘ট্রানজিশনটা লিগ্যাল কি না’, সেটা জানতে। কিন্তু তাদের উত্তরে আমরা কনভিনসড না। তারা সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলার লিখিত অনুমোদন দেখাতে পারেনি।”

পেট্রোবাংলার পরিচালক মাহবুব সারওয়ার রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্রির সিদ্ধান্তটি এগিয়ে নিতে মার্কিন কোম্পানিটির পেট্রোবাংলার অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

শেভরন গত বছর তাদের সম্পদ বিক্রির প্রাথমিক ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তা কিনে নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং মার্চে উড ম্যাকেঞ্জি নামে একটি কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগ করে।  

এর মধ্যেই চীনা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনায় এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি।

পেট্রোবাংলার সঙ্গে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে তিনটি ব্লকে বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে আসছে শেভরন। 

ওই তিন ক্ষেত্রে থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রতিদিনের গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৫৫ শতাংশ। গ্যাস ছাড়াও তিনটি ক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসেবে প্রতিদিন তিন হাজার ব্যারেল তরল হাইড্রোকার্বন উৎপাদন করে আসছে শেভরন।

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই তিন গ্যাসক্ষেত্রের সম্পদমূল্য প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে শেয়ারের মালিকানা চীনের কনসোর্টিয়াম হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে গত এপ্রিল মাসে ঘোষণা দেয় শেভরন।   

চায়না ঝেনহুয়া অয়েল বাংলাদেশে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিতে প্রাথমিক চুক্তি করেছে। এই ঝেনহুয়া অয়েল এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম সিএনআইসি করপোরেশনের কনসোর্টিয়ামই হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড।

চায়না নিংবো ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন কোম্পানি লিমিডেট- সিএনআইসি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

শেভরনের সঙ্গে হিমালয়ের চুক্তি চূড়ান্ত হলে এটাই হবে দক্ষিণ এশিয় দেশটিতে চীনের প্রথম বড় কোনো বিনিয়োগ।