সচিবালয়ে রোববার ডিসিসিআই এবং ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি একথা বলেন।
বোর্ড সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিতে সরকার হস্তক্ষেপ করবে কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “না, গভর্মেন্ট ইন্টারফেয়ার করার মতো কোনো কারণ নেই। ইট ইজ অল আন্ডার দি জুরিসডিকশন অব দি বোর্ড।”
ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বিগত চেয়ারম্যানের বয়স এখন ৮৩ বছর।
“সুতরাং পরিবর্তন ইজ ভেরি নরমাল।”
জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক মেরুদণ্ড বলে পরিচিত দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন হয় গত জানুয়ারিতে। সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন হয়।
সম্প্রতি বিবাদে জড়িয়ে পড়া চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে সংবাদ মাধ্যমে। ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে আহসানুল আলম পারভেজকে হুমকির খবর প্রকাশের পর বোর্ড সভায় ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়াসহ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পরিচালক জানান। তবে চার দিন পর ইসলামী ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই সব সিদ্ধান্তের কথা অস্বীকার করা হয়।
ভাইস চেয়ারম্যান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন বলে তার মন্তব্যের পর শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে আহসানুল আলম পারভেজের পক্ষে অবস্থান জানান পরিচালনা পর্ষদের নয়জন সদস্য।
তারা বলেছেন, কোনো পরিচালককে হুমকির মুখে পদত্যাগ করানো হলে তারাও একযোগে পদত্যাগ করবেন।
দেশের বাইরে থাকা আরও তিনজন পরিচালক তার পক্ষে আছেন জানিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলম বলছেন, পরিচালনা পর্ষদের ২১ সদস্যের অধিকাংশই তার সঙ্গে আছেন।
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সদস্যদের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, “এক্কেবারে মারামারি চলছে।”
এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আই হ্যাভ নো আইডিয়া।”
চেয়ারম্যানের সামর্থ্যের উপর ‘আস্থা’র কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, “ফলে সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো কারণ নেই।”
তিনি বলেন, “বোর্ডের চেয়ারম্যান আমার মতে একটা ভেরি কম্পিটেন্ট লোক, এক সময় আমার এডিশনাল সেক্রেটারি ছিল।”
“আমাদের ইন্টারভেনশন হবে যদি আইডিবি কোনো প্রশ্ন করে। আইডিবি কোনো প্রশ্ন করলে সেটার জবাব আমি চাই।”
গত ১১ মে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে ব্যাংকটির পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে।
এর দুদিন পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান (ইভিপি) মাহবুব আলমকে অন্য বিভাগে বদলি করা হয়।
পাশাপাশি জনসংযোগ ও সিএসআর বিভাগের প্রধানকেও বদলি এবং ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়া, ইফতারের ১৩ কোটি টাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানান আহসানুল ও পরিচালক কাজী শহীদুল আলম।
এরপর বুধবার ইসলামী ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা অস্বীকার করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে এসে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, “ভাইস চেয়ারম্যান মিডিয়ায় বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসলে সেটি সত্য নয়। ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে টাকাই আছে ২৭ কোটি টাকা।
“পত্রিকায় এটা প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে…।”
ইসলামী ব্যাংক ফের স্বাধীনতাবিরোধী নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে বলে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন আরাস্তু খান।