সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ‘অজ্ঞ’ বাংলাদেশের ব্যাংক কর্মকর্তারা

বিশ্বজুড়ে র‌্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে অজ্ঞতার চিত্র ফুটে উঠেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2017, 02:45 PM
Updated : 16 May 2017, 07:46 PM

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে ২৮ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা ‘খুবই অজ্ঞ’, ২২ শতাংশ ‘অজ্ঞ’, ‘সামান্য ধারণা’ রয়েছে ২০ শতাংশের।

গত শুক্রবার সাইবার ক্রাইমের শিকার হয় বিশ্বের ১০০টির মতো দেশ; একটি ‘র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য ও টেলিকমসহ বিভিন্ন খাতের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই কম্পিউটার ম্যালওয়্যার বাংলাদেশেও কিছু কিছু আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশের সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হওয়ায় ঝুঁকির আশঙ্কার মধ্যেই ব্যাংকগুলোর উদাসীনতার চিত্র তুলে আনল বিআইবিএম।

‘ব্যাংকিং খাতে সাইবার নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই কর্মশালায় নাজডাক টেকনোলজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজ আহমেদ ও বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ‘খুবই ভালো’ ধারণা রয়েছে ৪ শতাংশ কর্মকর্তার, ‘ভালো ধারণা’ রয়েছে ১০ শতাংশে এবং ‘মোটামুটি ধারণা’ রয়েছে ১৬ শতাংশের।

২১টি ব্যাংকের উপর এই গবেষণাটি চালায় বিআইবিএম। এর মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৪টি, রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি এবং বিদেশি তিনটি।

৯০ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা গবেষকদের বলেছেন, ব্যাংক খাতে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে বলে তারা মনে করছেন।

ছবি- রয়টার্স

নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অজ্ঞতার অভাবের পাশাপাশি গ্রাহকদের অসচেতনতার বিষয়টিও উঠে আসে গবেষণায়।

মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে এই কর্মশালার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাইবার নিরাপত্তায় গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং আইটি শাখার রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও তার ফল না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

“এরপরও দেশের অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী নিরাপত্তার মানে পৌঁছাতে পারেনি। এ কারণে ব্যাংক খাতে সাইবার ঝুঁকি এখনও রয়েছে।”

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন ডেপুটি গভর্নর।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, “সাইবার ঝুঁকিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এ ধরনের একটি বড় ঝুঁকি ব্যাংকিং খাতে থাকলেও দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। তাই ভারতের মতো আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।”

এখনই প্রস্ততি না্ নিলে ব্যাংক খাতের জন্য ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

পূবালী ব্যাংকের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আইটি নিরাপত্তা খাতে আরও জোর দিতে হবে। কোনো সংকেত এলেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

“কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকে অ্যালার্ট মেসেজ দেখলেও ঠেকানোর জন্য দক্ষ জনবল নেই।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে গাইডলাইনে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হবে। আইটি নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।