আবার আদালতে যাবেন ট্যানারি মালিকরা

সরকারি সংস্থা বিসিকের ‘অব্যাবস্থাপনার কারণে’ চামড়া শিল্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অভিযোগ করে ট্যানারি মালিকরা আবারও আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2017, 11:47 AM
Updated : 27 April 2017, 02:53 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ অভিযোগ করেন, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপি ঠিকভাবে কাজ করছে না। ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনটি ক্রোম রিকভারি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়নি। ক্লার্ক পাওয়ার জেনারেটর সিস্টেম নির্মাণও শেষ হয়নি।

“শুধু তাই নয়, গত ৮ এপ্রিল ইউটিলিটি বন্ধের পরের দিন আদালত ১৫ দিনের মধ্যে সাভারে গ্যাস সংযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে দেড়শ কারখানার মালিক গ্যাস সংযোগের আবেদন করলেও পেয়েছেন মাত্র নয়জন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিসিকের অব্যাবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”

সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষ হলেই আদালতে যাবেন বলে জানান ট্যানারি মালিকদের সমিতির এই নেতা।

হাজারীবাগে থাকার সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ট্যানারি মালিকরা পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিনের জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন।

এ বিষয়ে শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ৯ এপ্রিল ১৪২ ট্যানারির বকেয়া ৩০ কোটি ৮৩ লাখ এবং প্রতি মাসের জরিমানার ১০ হাজার টাকা মওকুফ করে কারখানাগুলোকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে নির্দেশ দেয়।

যেসব ট্যানারি কারখানা সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেছে, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয় ওই আদেশে।

এর আগে গত ২ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, সাভারে চামড়া শিল্প নগরী বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া বিসিক সর্বোচ্চ আদালতে ‘অসত্য তথ্য’ পেশ করেছে। দেশের চামড়া শিল্প তাদের ‘চরম ব্যার্থতা ও অব্যবস্থাপনার’ শিকার।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে শাহীন দাবি করেন, হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা বন্ধের পর থেকে বুধবার পর্যন্ত চামড়া শিল্পমালিকদের ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। রপ্তানিকারকদের ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষতি হয়েছে ১৪২ কোটি আট লাখ টাকা।

এছাড়া হাইড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষতি হয়েছে ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। লেদার গুডস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষতি হয়েছে ৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। লেদার ক্যামিক্যাল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ক্ষতি হয়েছে ৬৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। স্পিলিট চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এর বাইরে এক হাজার ৫০৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার কাজ বাতিল হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকে পরিবেশসম্মত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত ‘ইকোলেবান’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র নিরূপন করা হয়েছে বলে ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

চামড়া শিল্প রক্ষা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।