ব্যবসায় পরিবেশ: বিশ্ব ব্যাংকের র‌্যাংকিং নিয়ে প্রশ্ন বাণিজ্যমন্ত্রীর

ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 11:41 AM
Updated : 19 April 2017, 11:41 AM

বুধবার সচিবালয়ের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড ফেসিলিটেশন’ শীর্ষক এক পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, “যে সংখ্যাটা দেওয়া হয়েছে- আমি এটার সাথে একমত না। এটা কোন হিসাব করে?

“আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বহু দেশ আছে। তাদের তেমন ব্যবসা বাণিজ্য নাই, তেমন রপ্তানিও নাই, তার সাথে যদি বাংলাদেশকে তুলনা করা হয়।”

বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৭’ প্রতিবেদনে ব্যবসা করার পরিবেশের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৬ নম্বরে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৮।

তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভুটান ৭৩, শ্রীলংকা ১১০, ভারত ১৩০ এবং পাকিস্তান ১৪৪তম স্থানে রয়েছে।

নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন সহজীকরণ- এই মাপকাঠির ভিত্তিতে এই তালিকা করা হয়।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে,অর্থাৎ ২০২০ সাল নাগাদ এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কী করে ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনা যায়,সেই পরিকল্পনা সাজাতে চাচ্ছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিতে হবে। একটি হচ্ছে- সময় কমাতে হবে, বিভিন্ন ধাপ কমাতে হবে, উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এই তিনটি বিষয় যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারি তাহলে আমাদের ব্যবসা অনেক দূর চলে যাবে।

“দেশের ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর রাখতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারেন; যেন ২০২১ সালের ওই সূচকে ১০০ এর নিচে চলে আসে বাংলাদেশ।”

দেশের পরিবেশের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে আমরা অনেক বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। বাংলাদেশে গত ৮ বছর কাজ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছি। এনবিআর ডিজিটাল হয়েছে। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় একটা টাস্কফোর্স করবে। সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সেটা পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।”

এই টাস্কফোর্সে বণিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি রাখতে এফবিসিসিআই সভাপতি অঅবদুল মাতলুব আহমাদ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সম্মতি দেন মন্ত্রী।

তোফায়েল বলেন, “কোম্পানি আইনের সংস্কার আমরা খুব দ্রুত করব। আমাদের কোনো জায়গায় যাতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে।  আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না। আমরা মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি।”

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে হলে আমাদের অর্থনীতির আকার কত বাড়াতে হবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে বড় বিনিয়োগ দরকার। বিনিয়োগ আনতে দরকার যথাযথ পরিবেশ।

“বর্তমানে বিনিয়োগের পরিবেশে আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মাঝেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যদি আমরা বর্তমানের এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে পারি, তাহলে দুই অংকের প্রবৃদ্ধিতে ন্যাচারালি পৌঁছে যাব।”

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন সচিব এসএম গোলাম ফারুক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ, চট্টগ্রামের বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান, বিজিএমইএর পরিচালক শহীদুল হক প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।