বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অপারেটরটির নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটে কাস্টমার কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে একনেক অনুমোদিত ৬৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হওয়ায় এখনও ঝুলে আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একনেকের অনুমোদিত প্রকল্পটিতে এখনও অর্থ ছাড় না হওয়ার বিষয়টিতে আমরা কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছি।
“টেলিটকের বিনিয়োগ যদি আমরা বৃদ্ধি করতে না পারি, অন্তত নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে, টেলিটকের গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হবে। এটা কঠিন সত্য, এটা আমাদের মানতে হবে।”
টেলিটকের টু-জি ও থ্রি-জি বিটিএস (বেজ ট্রানসিভার স্টেশন) নিয়ে মোট বিটিএসএর সংখ্যা তিন হাজার ৭০০টি।
আরও ১০০টি বিটিএস যুক্ত হবে হচ্ছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, “বাজারে সবেচেয়ে বড় অপারেটরের টাওয়ার সংখ্যা ১২ হাজার, সেখানে সমভাবে কীভাবে টেলিটক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে তা আমার বোধগম্য নয়। নেটওয়ার্ক কোনো ম্যাজিক নয় যে- তুড়ি দিলাম, নেটওয়ার্ক হয়ে যাবে, টাওয়ার বসে যাবে, তাতো নয়। অর্থের প্রয়োজন, এটা হল রূঢ় বাস্তবতা। আমি কষ্টের কথাটি বললাম।”
“প্রধানমন্ত্রী মাতৃসুলভ স্নেহে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি বলেছিলেন, আমরা পুরোপুরি গ্রান্ট না দেই, এক শতাংশের কম সুদের হারে টেলিটককে এ অর্থায়নটি আমরা করি।”
নানা কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের অর্থ ছাড় আটকে রয়েছে জানিয়ে অর্থ ছাড় না পেলে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “অর্থ ছাড় এখনও পাচ্ছি না। এ অর্থ ছাড় না পেলে এমএনপি (নম্বর ঠিক রেখে অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ) চালু হলে আসলে টেলিটকের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে, তা আমার জন্য দেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক জিনিস হবে। আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না, এ বাধাটি আমরা কেন পাচ্ছি।”
এ অর্থ ছাড়া পেলে টেলিটক নিজের পায়ে দাঁড়াবে আশা প্রকাশ করে তারানা বলেন, “এইটুকু প্রতিশ্রতি দিতে পারি, এই অর্থের একটি অংশও অপব্যয় হবে না, একটি অংশও দুর্নীতির কারণে কারো পকেটে যাবে না। জিনিসটি আমি নিজে মনিটর করব।”
একনেক অনুমোদিত প্রকল্পের অর্থ ছাড় হলে টেলিটক চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দুই বছরের মধ্যে টেলিটক বাজারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এরপরও যদি টেলিটক দাঁড়াতে না পারে, সেই ব্যর্থতা টেলিটকের হবে। তার আগে কিছুতেই এর দায়ভার টেলিটকের উপর চাপাতে পারছি না। সুযোগ না দিলে ব্যর্থতা কীভাবে নেবে, আমি বুঝতে পারছি না।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, গত মাসে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ছিল ৯৩টি; এ মাসে আরও তিনটি যুক্ত হল। এখন কাস্টমার কেয়ারের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৬টি। গত মাসে রিটেইলারের সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজারর ২০০, এ মাসে সেটি ৫৬ হাজার।
গত দেড় বছরে টেলিটকের যেটুকু সাফল্য এসেছে তা স্ব অর্থায়নে এসেছে বলে দাবি করেন তারানা হালিম।
টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ৬৭৬ কোটি টাকার একটি ঋণ প্রস্তাব প্রায় ৯ মাস ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। গত বছর জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদনও দেওয়া হয়।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে গত ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ দেশে প্রায় ১৩ কোটি গ্রাহকের মধ্যে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ৩৭ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। পাঁচ কোটি ৯৩ লাখের বেশি গ্রাহক নিয়ে প্রথমে রয়েছে গ্রামীণফোন।
অনুষ্ঠানে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. গোলাম কুদ্দুসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে নববর্ষ উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক ডাকটিকেট, ৫০ টাকা মূল্যমানের একটি স্যুভেনির, ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড প্রকাশ করা হয়।