ব্যাংক খাতে ‘উদ্বিগ্নতাবাড়াচ্ছে’ খেলাপি ঋণ

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তা ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে মত এসেছে এক কর্মশালা থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 06:59 PM
Updated : 11 April 2017, 07:45 PM

২০১৬ সালের জুনে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে ১০ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে মঙ্গলবার বিআইবিএমের ওই কর্মশালায় এই উদ্বেগ জানানো হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানের কথায়ও ছিল খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগের সুর।

বাংলাদেশব্যাংকেরহিসাবে, গতবছরেরসেপ্টেম্বরশেষেখেলাপিঋণেরপরিমাণছিল৬৪হাজারকোটিটাকা।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপকড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী জানান, ২০১৫ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, তা এক বছরের ব্যবধানে ১০ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, “বড় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।”

ডেপুটি গভর্নর রাজি হাসান বলেন, “বিআইবিএমের গবেষণায় ২০১৬ সালের ঋণ ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত তারল্য এবং খেলাপি ঋণের সমস্যা উঠে এসেছে। এ দুটি বিষয় এখন ব্যাংকিং খাতে উদ্বিগ্নতা বাড়াচ্ছে।”

কর্মশালায় বিআইবিএমেরঅধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, “বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ১ শতাংশের কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেএ হার ৪০ শতাংশের উপরে। একই পরিবেশে কাজ করে এত কম-বেশি হবে কেন? এখানে কোনো সমস্যা আছে।”

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, “আইনি ব্যবস্থায় খেলাপির অর্থ আদায় সময়সাপেক্ষ। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সাহায্য নিয়ে তা আদায় করা সম্ভব হতে পারে।”

রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে এ কর্মশালা হয়।

মূল প্রবন্ধে ড.প্রশান্ত বলেন, কিন্তু ছোট এবং মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ কমছে। এক্ষেত্রে শহরে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলে ঋণ প্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।”

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, “বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর একটি অংশ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে।

“কিন্তু ব্যাংকগুলো ছোট এবং মাঝারি ঋণগ্রহীতাদের দিকে কম নজর দিচ্ছে।”

ব্যাংকগুলোর তারল্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হলে তা ‘আত্মঘাতী’ বলে সতর্ক করে দেন বিআইবিএম মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে হলে তথ্য ভাণ্ডারগড়ে তুলতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকেই অর্থ ব্যয় করতে হবে।

অধ্যাপক হেলাল চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির মতো করে জামানত ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারছে না। ফলে শিল্প কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না।

ডেপুটি গভর্নর রাজি হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনেকে এখন গ্রেপ্তার। বেনামী চিঠি এবং গণমাধ্যমের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার না করে কোন অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়েছে।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, “দুদকের গ্রেপ্তারের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি এ খাতের জন্য শুভ নয়।”