ক্ষতিপূরণ মওকুফ, ট্যানারিগুলোকে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা

পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪২ ট্যানারির বকেয়া ৩০ কোটি ৮৩ লাখ এবং প্রতি মাসের জরিমানার ১০ হাজার টাকা মওকুফ করে কারখানাগুলোকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2017, 07:37 AM
Updated : 9 April 2017, 12:27 PM

ট্যানারিগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। হাজারীবাগ থেকে যেসব কারখানা সাভারে যাবে, তাদের শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে ওই অর্থ ব্যয় করবেন শ্রম সচিব।

ট্যানারি মালিকদের একটি আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া অর্থ পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করেছিলেন ট্যানারি মালিকরা। 

আদালতের নির্দেশের পরও সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে না গিয়ে যেসব চামড়া কারখানা রাজধানীর হাজারীবাগে থেকে গেছে, তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

রোববারের আদেশে আপিল বিভাগ বলেছে, যেসব ট্যানারি কারখানা সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেছে, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি সাভারের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিসিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য সিইটিপি ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হবে না। এই নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে গিয়ে ধলেশ্বরী যেন আরেকটি বুড়িগঙ্গা না হয়।”

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর পর সেখানে নিজস্ব সম্পত্তি বা স্থাপনা মালিকরা যদি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে গ্যাস, বিদুৎ, পানির সংযোগ দিতে বলেছে আদালত।

আপিল বিভাগে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
 
অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো না সরানোয় কারখানাগুলোকে পরিবেশের ক্ষতি হিসেবে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

সেই টাকা ট্যানারি মালিকরা না দেওয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাই কোর্টে আরেকটি আবেদন করে। এরপর বকেয়া প্রায় ৩১ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয় হাই কোর্ট।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর বিরুদ্ধে আপিল করে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার আদেশের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চাওয়া হয়।

ওই আবেদনের ওপর শুনানি করে গত ৩০ মার্চ আপিল বিভাগ হাজারীবাগের সব ট্যানারি ৬ এপ্রিলের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়ে। আদেশে বলা হয়, ট্যানারি বন্ধ হওয়ার পর জরিমানা পুনর্বিবেচনার আবেদন আদালত বিবেচনা করবে।