হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে বাধা তৃতীয় পক্ষ: সংসদীয় কমিটি

হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরাতে তৃতীয় কোনো পক্ষ জটিলতা করছে বলে মনে করছে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 12:26 PM
Updated : 21 March 2017, 12:33 PM

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে জটিলতার মধ্যে মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “সাভারে এখনও গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। জমি রেজিস্ট্রিও হয়নি, সিইটিপি ইনকমপ্লিট। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের প্রেশার দিলে কীভাবে হবে?

“সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই আন্তরিক। তারা সমাধান চায়। কিন্তু তৃতীয় একটা পক্ষ এখানে কাজ করছে। মনে হচ্ছে, পাট শিল্প ধ্বংসের মতো এখানেও কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”

সাভারে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের মধ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনে হাই কোর্ট হাজারীবাগের সব ট্যানারি বন্ধের নির্দেশ দেয়।

২০০৩ সালের ১৬ অগাস্ট একনেক সভায় চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন হলেও তার কাজ শেষ হতে এক যুগ পেরিয়ে যায়। হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারিকে সেখানে সরে যেতে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে থাকে, দফায় দফায় পেছাতে থাকে ‘ডেডলাইন’।

সেই সিইটিপি চালু হয় গত বছর জানুয়ারিতে। এই দীর্ঘ সময়ে টানারি সরাতে কারখানা মালিকদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বহুবার।

ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারীবাগের যে ১৫৫টি ট্যানারির সাভারে যাওয়ার কথা, তার মধ্যে ২৮টির মালিককে গত জানুয়ারিতেও উকিল নোটিস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

হাজারীবাগের ট্যানারি থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে নদীতে

মালিকদের গড়িমসিতে ক্ষুব্ধ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গতবছর কারখানাগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন; কিন্তু কাজ হয়নি তাতেও। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়ার পরও ট্যানারি না সরায় হাজারীবাগে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়।

পরে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং পরে ২০১৭ সালের চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয় সরকার।

আদালতের অনুমতি না নিয়ে নতুন করে সময় বাড়ানোর ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গত ৩ জানুয়ারি বেলার পক্ষে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি অবিলম্বে সব ট্যানারি বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, “চামড়া ব্যবসায়ীদের সাভারে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে সব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কেন এই বিলম্ব হচ্ছে?

“আমরা কারখানা মালিক ও সরকারকে আপসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। দুই পক্ষই সমাধান চায় কিন্তু তৃতীয় পক্ষ ঘোরাচ্ছে।”

এই তৃতীয় পক্ষই আদালতে গিয়েছে কি না-প্রশ্ন করা হলে ওমর ফারুক বলেন, “সেটাই মনে হয়।”

ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক ও রহিম উল্লাহ অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিও ছিলেন।

ট্যানারি মালিকরা আরও সময় চান কি না- জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, “সরকারের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে আমরা তাদেরকে বলেছি।”

বৈঠকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন চামড়া শিল্পনগরী ঢাকা প্রকল্পের কোন কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ, কাজের বিবরণ, কাজের অগ্রগতি ও কত টাকার কী কী বিল পরিশোধ করা হয়েছে, তার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটির কাছে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

চামড়া শিল্পনগরী ঢাকা প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে সংসদীয় কমিটি।