বুধবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমরা কাজে শতভাগ সততায় বিশ্বাস করি। বিনিয়োগকারীদের সব অভিযোগ শুনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে বেজা।”
‘অ্যাট্রাকটিং ইনভেস্টমেন্ট ইন ইকোনমিক জোন অব বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই সেমিনারে সরকারের ঊর্ধতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও দেশ-বিদেশি অর্থনীতিবিদরা আলোচনায় অংশ নেন। বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন অথরিটি-বেজার একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অগ্রগতি তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, “বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নত না করে সারা জীবন বিদেশিদের দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা আসবে না। কারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার অভাব নেই।”
বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, “অবকাঠামো হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে দুই লাইনের রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন যাচ্ছে। চার লেনের সড়ক হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামে। এছাড়া ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত সড়ক চার লেন হয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য বেজার সেবা আরও গতিশীল করতে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ একটি সেবার কথা উল্লেখ করে পবন চৌধুরী বলেন, সেখান থেকে নতুন একজন বিনিয়োগকারী সব দাপ্তরিক সুবিধা পাবেন। চলতি বছরেই এ বিষয়ে একটি আইন সংসদে পাস হবে।
“বিনিয়োগকারীদের সেবা দিতে বিলম্ব করলে বেজার কর্মকর্তা হিসাবে আমিও শাস্তির মুখোমুখি হব-এমনটাই থাকছে সেই আইনে।”
বেজার নিজস্ব আয় থেকে বেসরকারি ইপিজেডগুলোর জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের পরিকল্পনার কথা দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শোনানা পবন চৌধুরী। ভবিষ্যতে এই তহবিল আরও বড় হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাছের, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
চীন, হংকং, জাপান, থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল, দেশীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও দেশের আঞ্চলিক চেম্বারের মোট পাঁচশ জন সদস্য সেমিনারে অংশ নেন।
“এনবিআর ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব একটা পলিসি করতে যাচ্ছে। ভ্যাট, আমদানি শুল্ক ও কাস্টমস ডিউটিসহ বিভিন্ন রকম কর সবিধা পাচ্ছে ইকনোমিক জোনের বিনিয়োগকারীরা।”
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেজাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের পরিচালনায় সেমিনারে ‘এনাবলিং এনভায়রনমেন্ট ফর ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা করেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ইকোনমিক জোনের উৎপাদিত পণ্য শুধু রপ্তানির জন্য নয়, বাংলাদেশের বিশাল বাজারও পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থনৈতিক অঞ্চলের এই বিশেষ দিকটি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে হবে।
“যে কোনো বিনিয়োগের ফলাফল দুই/চার বছরের মধ্যে নাও আসতে পারে, বরং আরও লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাজার আরও শক্তিশালী হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।”
শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশীয় দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মোস্তাফিজ।
“দেশের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার হার বাড়লেও এর দক্ষ শ্রমিকদের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিদেশি জনশক্তি। এই ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে শিল্পায়নের সুফল আসবে না।”
আলোচনায় জাপানি বিশেষজ্ঞ কুবাইশি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জন করার অনেক কারণ আছে। দেশটি প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থা ধরে রেখেছে।”
দ্রুত শিল্প-কারখানার বিস্তারে বেজার প্রচেষ্টা খুবই বাস্তব সম্মত বলে মন্তব্য করেন ৪০ বছর ধরে এই খাতের সঙ্গে যুক্ত কুবাইশি।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের কর্মকর্তা সীমা মাংগি, আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনের এমডি মাইনুদ্দিন মোনেম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।