রানা প্লাজা ছিল ‘ওয়েক-আপ কল’: তোফায়েল

সাভারে রানা প্লাজা ধসের ফলে তৈরি পোশাক খাতে ‘কঠিন পরিস্থিতি’ মোকাবেলার পর সেটাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসাবে বর্ণনা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 03:06 PM
Updated : 15 March 2017, 03:10 PM

বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে ক্রমান্বয়ে গ্রিন কারখানায় রূপান্তরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল সম্প্রতি ১০টি গ্রিন কারখানা বাছাই করেছে। যেখানে ১০টির মধ্যে সাতটিই বাংলাদেশের। এক নম্বরে এমি হোল্ডিংস, নম্বর ২, প্লামি ফ্যাশনস।

“১৭০টির মতো গ্রিন ফ্যাক্টরি পাইপলাইনে আছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনাকে আমরা ওয়েক-আপ কল হিসাবে চিহ্নিত করি। আমাদের সবগুলো শিল্পকে কমপ্লায়েন্সের পথে এগিয়ে চলেছি।”

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেখানকার পাঁচটি পোশাক কারখানার ১১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন, যা পৃথিবীতে ভবন ধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। এ ঘটনার কয়েক মাস আগেই আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১১ জন নিহত হন।

এরপরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ শুরু হয়।

‘অনিরাপদ পরিবেশ’ থেকে পোশাক নেওয়া পশ্চিমা ক্রেতারা নিজ নিজ দেশে সমালোচনা মুখে পড়ে। এ রকম প্রেক্ষাপটে কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নেই এমন কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করা হয়।

এতো সমালোচনা গায়ে নিয়ে চাহিদার জোরে দাঁড়িয়ে থাকা রপ্তানির প্রধান এই খাতের কারখানাগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীর ওইসব মন্তব্য আসে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমাদের রানা প্লাজা ধসের পরে বিশ্বব্যাপী আমাদের অ্যাপারেল সেক্টর কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আজকে আবার আমরা এগিয়ে চলেছি।”

তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনার পরপরই বিশ্ব ক্রেতা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে দুটি পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠন করা হয়। কারখানার মানোন্নয়নে গৃহীত নীতিমালার বাস্তাবায়ন কাজের দেখভালের কাজ শুরু করে সংগঠন দুটি।

এ দুই সংগঠনের সঙ্গে দেশীয় একটি সংগঠনকে ৩ হাজার ৬০০ ইন্ডাস্ট্রির পরিদর্শনের দায়িত্ব দেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

“অধিকাংশ ইনস্পেকশন হয়ে গেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৫টি আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সমস্ত কারখানাগুলোকে কমপ্লায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি।”

সবগুলো তৈরি পোশাক কারখানাকে পর্যায়ক্রমে গ্রিন ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

“অনেকগুলো কারখানা আমি নিজে পরিদর্শন করেছি, অসাধারণ পরিবেশ সেগুলোতে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”

কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকট আগামী দুই বছরের মধ্যে মিটে যাবে আশ্বাস দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আজকে আমরা গ্যাসের কিছু সংকটের মধ্যে আছি। আমরা আশা করব, আগামী দুই বছরের মধ্যে আমাদের গ্যাস সংকট থাকবে না।”

অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে পেয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে জার্মানির শীর্ষ অবস্থানে আসার খবর দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জার্মানি ইজ নাম্বার ওয়ান ডেস্টিনেশন অফ আওয়ার গার্মেন্টস এক্সপোর্ট। পত্রিকায় সংবাদও বেরিয়েছে। এ জায়গায় আগে আমেরিকা ছিল, এখন জার্মানি এগিয়েছে।”

বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউট আয়োজিত সপ্তদশ নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ জ্বালানি এক্সপোর একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ‘টেকসই উৎপাদনব্যবস্থা বাধ্যতামূলক’ মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিন্জ বলেন, “বেশিরভাগ কারখানা এখনও সনাতন ব্যবস্থায় চলে, ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধা নাই। এ কারণে সব দূষিত পানি পরিবেশের সঙ্গে ‍যুক্ত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গার্মেন্টস খাতে অগ্রগতির ধারা যেভাবে অব্যাহত রেখেছে, সেভাবে যেন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থাপনা তৈরি করে। আমার আশা, বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ, ইসিএএস-এর নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, সোলারল্যান্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনি জুয়ে বক্তব্য দেন।

চার দিনব্যাপী সপ্তদশ নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ জ্বালানি এক্সপোতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি থাকছে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন এবং বিভিন্ন সিস্টেমের প্রদর্শনী।

এক্সপোর মিডিয়া পার্টনার হিসাবে রয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।